রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

| ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এইডস রোগী দেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫:৪৩, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এইডস রোগী দেশে

এইডস রোগ। ছবি: সংগৃহীত

দেশে গত বছরের নভেম্বর থেকে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯১ জন নতুন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৫৩ জন বেশি। 

এক বছরে রোগী বৃদ্ধি ও মোট শনাক্তের সংখ্যা গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ ২০০০ সালের পর গত এক বছরে দেশে নতুন এইচআইভি রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এ সময় শনাক্তের সংখ্যা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে।

গত সোমবার (১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত 'এইচআইভি/এইডস সিচুয়েশন রিপোর্ট–২০২৫'-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। 

বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনএএসপি) এসব তথ্য প্রকাশ করে।

প্রতিবেদন বলছে, আগের বছরের তুলনায় প্রায় দুই লাখ কম মানুষ পরীক্ষা করালেও নতুন সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে। 

এ সময়ে এইচআইভি–সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ২৫৪ জনের, যা আগের বছরের ৩২৬ জনের চেয়ে কম।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এইচআইভি পরীক্ষা ও চিকিৎসার সেবা আরও বাড়ানো, সরকারি ও কমিউনিটি সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা এবং নিচের স্তর পর্যন্ত সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

এইচআইভি মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগের ঝুঁকি বাড়ে। চিকিৎসা না পেলে এটি পরবর্তীতে এইডসে (অ্যাকোয়ার্ড ইমিউন ডেফিসিয়েন্সি সিন্ড্রোম) রূপ নেয়।

১৮% জানেন না তারা রোগী
বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগী ১৪ হাজার ৩১৩ জন, যার মধ্যে মারা গেছেন ২ হাজার ৬৬৬ জন।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, সম্ভাব্য এইচআইভি–আক্রান্তদের ১৮ শতাংশ এখনো জানেন না যে তারা সংক্রমিত। মোট সম্ভাব্য রোগীর সংখ্যা ধরা হচ্ছে ১৭ হাজার ৪৮০ জন।

সর্বোচ্চ বৃদ্ধির বছর

নতুন তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ১৪ লাখ ২১ হাজার মানুষ এইচআইভি পরীক্ষা করিয়েছেন—যা আগের বছরের তুলনায় ১ লাখ ৯১ হাজার কম।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে আরও ১০ লাখ ৭২ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করা হয়, যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে যেতে ইচ্ছুক অভিবাসী শ্রমিকদের পরীক্ষা কম হওয়াতেই সামগ্রিক পরীক্ষার সংখ্যা কমেছে। আগের বছর যেখানে ১৩ লাখ ৫ হাজার শ্রমিক পরীক্ষা করিয়েছিলেন, এবার তা কমে ১০ লাখ ১১ হাজার হয়েছে।

পরীক্ষা করা ব্যক্তিদের মধ্যে ১ হাজার ৮৯১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২১৭ জন রোহিঙ্গা। এর আগে এক বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল ২০২৩ সালে—৩২৯ জন।

কেন বাড়ছে এইচআইভি
 এ প্রশ্নের উত্তরে ন্যাশনাল এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের উপপরিচালক জুবাইদা নাসরিন বলেন, 'মূলত "কি পপুলেশন"-এর মধ্যে পরীক্ষা বেশি হওয়ায় শনাক্তের সংখ্যাও বেড়েছে।'

কি পপুলেশন বলতে সেই গোষ্ঠীগুলোকে বোঝায় যারা ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নেন, নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী, এবং ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠী।

তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে এই গোষ্ঠীর ১ লাখ ১৭ হাজার মানুষ পরীক্ষা করিয়েছেন, যেখানে আগের বছর ছিল ৯৬ হাজার ৯২২।

গত বছরের জুনে সরকার-সমর্থিত একটি কার্যক্রম শেষ হওয়ায় এই গোষ্ঠীর মধ্যে কনডম, সূঁচ-সিরিঞ্জ বিতরণসহ প্রতিরোধমূলক সেবা ব্যাহত হয়।

শনাক্ত রোগীর ৮১% পুরুষ
নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে—৫৬ শতাংশ কি পপুলেশন, ১২ শতাংশ প্রবাসী, ১১ শতাংশ রোহিঙ্গা আর বাকি অংশ সাধারণ জনগণ। লিঙ্গ অনুযায়ী—পুরুষ ৮১ শতাংশ, নারী ১৮ শতাংশ ও হিজড়া ১ শতাংশ।

বৈবাহিক অবস্থা অনুযায়ী—৫২ শতাংশ বিবাহিত, ৪২ শতাংশ অবিবাহিত আর বাকিরা বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত বা আলাদা থাকেন। এছাড়া, ২৫–৪৯ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি ৬৩ শতাংশ, ২০–২৪ বছর বয়সীরা ২১ শতাংশ।

চিকিৎসা গ্রহণের হারও কমেছে
তথ্য বলছে, এইচআইভি–পজিটিভ রোগীদের মধ্যে চিকিৎসা নেওয়ার হার আগের বছরের ৭৮ শতাংশ থেকে কমে ৭৪ শতাংশে নেমে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'যারা তিন মাসের বেশি সময় ওষুধ বন্ধ রাখেন, এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ায় চিকিৎসায় থাকা রোগীর হার কমেছে।'

তথ্য অনুযায়ী, সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্তদের ৮২ শতাংশ তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানেন এবং সংক্রমিত ব্যক্তিদের ৯১ শতাংশ ভাইরাল সাপ্রেশন (শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ খুব কমে যাওয়া) অর্জন করতে পেরেছেন।

এইচআইভি কি

এইচআইভি (হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) একটি ভাইরাস যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় এবং এইডস-এর কারণ হতে পারে। এটি অরক্ষিত যৌনমিলন, দূষিত সূঁচের ব্যবহার বা রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে ছড়ায়। এইচআইভি শরীরে থাকা কিছু নির্দিষ্ট তরল যেমন রক্ত, বীর্য, এবং বুকের দুধের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু এটি সাধারণ ছোঁয়া, জল, বা খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ায় না। 

এইচআইভি কীভাবে ছড়ায় 
অরক্ষিত যৌনমিলন এটি এইচআইভি সংক্রমণের প্রধান কারণ। একই সূঁচ একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলে সংক্রমণ হতে পারে। দূষিত রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে। গর্ভাবস্থা, প্রসব বা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা থেকে সন্তানে এইডস ছড়াতে পারে। 

এইচআইভি কীভাবে ছড়ায় না 
বায়ু, জল বা খাদ্য, স্পর্শ বা সাধারণ ছোঁয়া, লালা, ঘাম বা অশ্রুর মাধ্যমে এটি ছড়ায় না। 

প্রাথমিক লক্ষণ ও উপসর্গ 
সংক্রমণের দু-তিন মাস পর কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন: জ্বর, ক্লান্তি এবং মাথাব্যথা, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া, পেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা, ত্বকে ফুসকুড়ি, বমি বমি ভাব, বমি, বা ডায়রিয়া, গলা ব্যথা ও শুকনো কাশি এবং রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু
বিটিআরসির সামনে মোবাইল ব্যবসায়ীদের সড়ক অবরোধ
‘মিনেসোটা প্রোটোকল’ মেনে শুরু জুলাই শহীদদের শনাক্তকরণ
বইয়ের জ্ঞান খেলাপিদের কাছে হার মানল: উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন
এভারকেয়ারে জোবাইদা, চলছে মেডিকেল বোর্ডের সভা
স্কুলিং মডেল বাতিলের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ শিক্ষার্থীদের
বাংলাদেশের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক চায় ভারত: প্রণয় ভার্মা
নির্বাচনে ৮৯% সাংবাদিক নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কায়: জরিপ
১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেডিকেল কোচিং সেন্টার বন্ধ
৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ : বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ভারত ও ভুটান
জুলাই আন্দোলনের অজ্ঞাত ১১৪ শহীদের পরিচয় শনাক্তে সিআইডির উদ্যোগ
জানুয়ারির শুরুতেই শিক্ষার্থীরা বই পাবে: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
সেন্টমার্টিন থেকে ১৮৫০ কেজি বর্জ্য অপসারণ করল কেওক্রাডং
বিএনপি ‘প্রতিশ্রুতির রাজনীতিতে’ বিশ্বাসী: রিজভী
খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত
সিএমপির সব থানার ওসি রদবদল
যে কারণে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করতে পেরেছি
৬৪ জেলায় ৬৪ বন্যপ্রাণী কর্মীকে স্বীকৃতি দেবে সরকার
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তফসিল চূড়ান্ত
ডোনাল্ড ট্রাম্প পেলেন ‘ফিফা শান্তি পুরস্কার’