সেনার হাতে গ্রাহকের তথ্য
টেলিনরের বিরুদ্ধে মামলা করবেন মিয়ানমারের মানবাধিকারকর্মীরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:৪৫, ৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২১:৫২, ৭ অক্টোবর ২০২৫

মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার ও নাগরিক সংগঠন নরওয়ের টেলিকম প্রতিষ্ঠান টেলিনরের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের সামরিক সরকারের হাতে লাখ লাখ গ্রাহকের ফোন-তথ্য ও ডেটা হস্তান্তর করেছে, যা পরবর্তী সময়ে গণআন্দোলন দমন ও বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন-পীড়নে ব্যবহার করা হয়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অন মাল্টিন্যাশনাল করপোরেশনসের সহায়তায় টেলিনরের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে আন্দোলনকারীরা। সোমবার টেলিনরের কাছে তারা আইনি নোটিস পাঠিয়েছে।
ওই নোটিসে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর সামরিক বাহিনী টেলিনরের দেওয়া তথ্য ব্যবহার করে অ্যাকটিভিস্টদের শনাক্ত, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও এমনকি হত্যা করেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, নরওয়ে সরকারের মালিকানাধীন কোম্পানি টেলিনর কোটি কোটি গ্রাহকের তথ্য সামরিক কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করে। এতে বহু আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়; তাদের মধ্যে কয়েকজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
মামলার বাদীদের একজন থাজিন নিয়ুনত আং বলেন, "আমার স্বামী আইনপ্রণেতা ফোয়ে জেয়া থাও-কে গ্রেপ্তারের কয়েক সপ্তাহ আগে তার তথ্য হস্তান্তর করা হয়েছিল, জানতে পেরে আমি ভীষণভাবে মর্মাহত ও আতঙ্কিত।”
আরেক বাদী কো ইয়্যে বলেন, "টেলিনরের প্রতি আমাদের আস্থা ছিল। কিন্তু তারা আমাদের রক্ষা না করে আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র (তথ্য) সরবরাহ করেছে।”
নরওয়ের আইনজীবী ইয়ান ম্যাগনে ল্যাংসেথ, যিনি বাদীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন, বলেন, “টেলিনরের কখনোই এই তথ্য হস্তান্তর করা উচিত ছিল না। তাদের এই ব্যর্থতার দায় তারা এড়াতে পারে না।”
তবে টেলিনর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর তারা এক “ভয়াবহ ও জটিল পরিস্থিতির” মধ্যে পড়ে—যেখানে সামরিক সরকারের নির্দেশ অমান্য করা “সন্ত্রাস বা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড” হিসেবে গণ্য হতে পারত এবং এতে কর্মীদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হতো।
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, তারা ২০২১ সালে তাদের মিয়ানমারের ব্যবসা বিক্রি করে দেয় লেবাননের এমওয়ান গ্রুপ-এর কাছে, যা পরে শেয়ার হস্তান্তর করে শ্বে বায়াইন ফিউ নামের সামরিকঘনিষ্ঠ এক কনগ্লোমারেটকে।
অভিযোগকারীদের দাবি, এই বিক্রয় ও হস্তান্তরের মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে গ্রাহকের তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশাধিকার পায়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বাচিত সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে দেশজুড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ ও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স-এর হিসাব অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে প্রায় ৭ হাজার মানুষ নিহত ও ৩০ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে।
মিয়ানমারের সেনা সরকার অবশ্য বরাবরই নাগরিকদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।