আকর্ষণীয় করুন শিক্ষকতা পেশা
প্রকাশ: ১৯:১৯, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
দেশের ১৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৬,৮০০ জন শিক্ষক আছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে পিএইচডিধারী মাত্র ৬,৪০০ জন। অর্থাৎ ১০,০০০-এরও বেশি শিক্ষক পিএইচডি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রায় সকল শিক্ষকের পিএইচডি থাকার কথা ছিল। আর যেই ৬,৪০০ জনের পিএইচডি আছে তাদের একটা বড় অংশই মনে করেন পিএইচডি অর্জনই একাডেমিক জীবনের শেষ অর্জন। তারা কোনো রকমে একটা পিএইচডি করেছেন, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে হলে একটা পিএইচডি ডিগ্রি দরকার।
অথচ পিএইচডি ডিগ্রি হলো গবেষণার ট্রেনিং মাত্র। এই ডিগ্রি শেষে স্বাধীনভাবে গবেষণা করা এবং ছাত্রদের করাতে না পারলে ওই পিএইচডি-র কোনো মূল্য নাই। আর কল্পনা করতে পারেন ১০ হাজারের বেশি শিক্ষকের কোনো পিএইচডি নেই। অথচ সারা পৃথিবীতে শিক্ষক হওয়ার আগেই শুধু পিএইচডি না পিএইচডি শেষে পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে স্বাধীন গবেষণা করতে পারার প্রমাণ দিতে হয়। ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কোনো রিস্ক নিতে চায় না। এত শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রি বিহীন হওয়ার মূল কারণ মাস্টার্স পাসদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া। একবার শিক্ষক হয়ে গেলে পিএইচডি করার চাপ আর নিতে না চাওয়া।
আর যাদের পিএইচডি ডিগ্রি আছে তাদের একটা বড় অংশ পিএইচডি’কে মঞ্জিলে মকসুদ হাসিল মনে করে। তারা শিক্ষকতা পদ থেকে প্রশাসনিক পদের দিকে ঝুঁকে যায়। এদের প্রশাসনিক পদ-পদবির লোভ দিনদিন বাড়তে থাকে। আজ যারা উপাচার্য, প্রো-উপাচার্য কিংবা ডিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বে আছেন—তাদের অনেকেই পিএইচডি শেষে পড়ানো ও স্বাধীনভাবে গবেষণার অভিজ্ঞতা অর্জনের আগেই পদ-পদবির জন্য রাজনীতিতে ঝুঁকে যায়। অথচ এই সময়টিই হওয়ার কথা ছিল সৃষ্টিশীল কাজের শ্রেষ্ঠ সময়। কিন্তু গবেষণা বা শ্রেণিকক্ষের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার বদলে তারা ছুটছেন বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ পাওয়ার প্রতিযোগিতায়।
ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের শ্রেণিকক্ষ, গবেষণা ও ল্যাবরেটরি শিক্ষার আসল ক্ষেত্রগুলোই হয়ে যাচ্ছে অবহেলিত। আর শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করতে না পারার কারণে মাস্টার্স পাস করে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ছুটি নিয়ে পিএইচডি করতে গিয়ে আর ফিরে আসছে না। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় যোগ করলে সেই পরিসংখ্যান বিশ্ববাসী জানলে বলবে ধরণী দ্বিধা হও।
লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
* মতামত লেখকের নিজস্ব
