সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান উপদেষ্টার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:১২, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও-এ ডব্লিউসিএস আয়োজিত ‘সুস্থ সাগর বিষয়ক ইনসেপশন কর্মশালায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ছবি: পিআইডি
বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ টিকিয়ে রাখতে বাণিজ্যিক স্বার্থের পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তার মতে, মাছ কেবল ব্যবসার পণ্য নয়—মানুষের পুষ্টি ও বেঁচে থাকার সঙ্গে এটি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (ডব্লিউসিএস) এবং ওয়ার্ল্ডফিশ আয়োজিত ‘সুস্থ সাগর (হেলদি ওশান)’ শীর্ষক ইনসেপশন কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, “কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, মৎস্য অধিদপ্তর—সব সংস্থাই সমুদ্রের সম্পদ রক্ষায় কাজ করছে। তবে মাছ ধরার ক্ষেত্রে শুধুই বাণিজ্যিক প্রবণতা সামনে এলে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ে। মানুষের খাবারের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।”
ক্ষতিকর জালের ব্যবহারকে তিনি সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য প্রধান হুমকি হিসেবে তুলে ধরেন। তার ভাষায়, “ফাঁস জাল, বেহেন্দি জালের মতো নিষিদ্ধ জালে বিভিন্ন আকারের মাছ ধরা পড়ে মারা যাচ্ছে। এতে সামগ্রিক মাছের মজুত কমে যাচ্ছে, যা উদ্বেগের বিষয়।”
বঙ্গোপসাগরের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের গবেষণা জাহাজ ড. ফ্রিডজোফ নানসেনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সাত বছরে বঙ্গোপসাগরে মাছের প্রাপ্যতা প্রায় ৭৮ শতাংশ কমে গেছে। একই সঙ্গে বহু এলাকায় দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের ঘাটতি; প্লাস্টিক দূষণও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। তবে কিছু ইতিবাচক তথ্যও রয়েছে—নতুন জরিপে সাগরে ৬৫টি নতুন মাছের প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রজাতি আগে বিশ্বের কোথাও নথিভুক্ত ছিল না।
অতিরিক্ত আহরণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মকানুন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বড় বড় জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে যা খুশি ধরার সুযোগ রাখা যাবে না। সবাইকে নিয়মের আওতায় আনতেই হবে।” তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় খাবার উপযোগী নয় এমন মাছ ধরা পড়ে সেগুলো আবার ফেলে দেওয়া হয়। এতে সাগরের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই জালের ফাঁস নিয়ন্ত্রণ ও আহরণ পদ্ধতির উন্নয়ন জরুরি।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিব-ইন-চার্জ) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমোডর শেখ মাহমুদুল হাসান, এবং মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডব্লিউসিএস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. ফারুক-উল ইসলাম।
