সংশোধিত বাজেটে গাড়ি কেনা ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮:৫৮, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৯:২৩, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে খরচে লাগাম টানতে যাচ্ছে সরকার। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আনতে অর্থ বিভাগ একের পর এক কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। সংশোধিত বাজেটের প্রস্তাবে এবার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সাশ্রয় ও দক্ষতা নিশ্চিত করার দিকে। গাড়ি কেনা, বিদেশ ভ্রমণ, নতুন প্রকল্প অনুমোদন—সব ক্ষেত্রেই আসছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ।
অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য আবেদন করতে পারবে না। সংশোধিত বাজেটে মূল পরিকল্পনার বাইরে নতুন ব্যয় যোগ করা যাবে না। উন্নয়ন খাতে যে অর্থ অব্যয়িত থাকবে, তা পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না। অর্থাৎ, এক খাতের উদ্বৃত্ত অর্থ অন্য খাতে ব্যয়ের সুযোগ এবার বন্ধ হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত বা দাপ্তরিক প্রয়োজনে নতুন গাড়ি কেনার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে ১০ বছরের পুরোনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হলে অর্থ বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে তা কেনা যাবে। পাশাপাশি বিদেশ ভ্রমণ, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও এসেছে কঠোর সীমাবদ্ধতা। অনুমতি ছাড়া কেউ বিদেশ সফরে যেতে পারবে না, এবং যেসব সফরের অনুমতি ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর খরচও সীমিত রাখা হবে।
অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব আয় প্রত্যাশার তুলনায় কম হওয়ায় এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ও মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ায় সরকারের ব্যয় কাঠামো পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তাই সংশোধিত বাজেটে ব্যয় কমিয়ে আনাই এখন মূল লক্ষ্য।
সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ৯ নভেম্বরের মধ্যে সংশোধিত বাজেটের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে তাদেরকে জানাতে হবে কোন কোন প্রকল্পে ব্যয় কমানো সম্ভব এবং কোন ক্ষেত্রে ব্যয় অপরিহার্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার শুধু ব্যয় নয়, ব্যয়ের যৌক্তিকতাও খতিয়ে দেখা হবে।
অর্থ বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা চাই প্রতিটি টাকার ব্যবহার যেন সঠিক উদ্দেশ্যে হয়। যেখানে ব্যয় না করলেই চলে, সেখানে সাশ্রয় করা হবে। গাড়ি কেনা, ভ্রমণ বা অফিস সংস্কারের মতো বিলাসী ব্যয় আপাতত স্থগিত রাখাই যুক্তিযুক্ত।'
সরকারের এই সিদ্ধান্তে প্রশাসনিক কার্যক্রমে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, গাড়ি ও বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে দাপ্তরিক তদারকি ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের কাজ কিছুটা ধীর হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বাজেট সংশোধনের এই পদক্ষেপ মূলত রাজস্ব ঘাটতি ও ব্যয় সংকোচনের অংশ। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এটি বাস্তবসম্মত উদ্যোগ। সরকারের আয় বাড়ছে না, কিন্তু ব্যয়ের চাপ কমছে না। ফলে বাজেটের ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যয় সংকোচন এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
একজন অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, 'সরকারি ব্যয়ের বড় অংশই প্রশাসনিক খাতে চলে যায়। সেখানে সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হলে উন্নয়ন ব্যয়ে আরও বেশি অর্থ রাখা সম্ভব হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, প্রয়োজনীয় খাত যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।'
এদিকে, সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়নের প্রস্তুতি হিসেবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নিজস্ব ব্যয় পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। যেসব প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে বা এখনো শুরু হয়নি, সেগুলোর অর্থ পুনর্বিন্যাসেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে কিছু প্রকল্প সাময়িকভাবে স্থগিত হতে পারে, তবে অর্থ বিভাগ বলছে, এই পদক্ষেপ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে।
বাজেট সংকোচনের এই সময়েও সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমানো হবে না বলে সূত্র জানিয়েছে। এসব খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সাশ্রয়ী পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। সরকার মনে করছে, সীমিত সম্পদের মধ্যেও প্রয়োজনীয় খাতে বিনিয়োগ ধরে রাখলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা সম্ভব হবে।
এইভাবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট দাঁড়াচ্ছে আরও সংযমী, আরও বাস্তবভিত্তিক। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় রোধ, সরকারি বিলাসিতা কমানো এবং আর্থিক সুশাসন প্রতিষ্ঠাই এর মূল লক্ষ্য। সরকার আশা করছে, এই কঠোর নীতিই আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে আরও সতর্কতা ও শৃঙ্খলার পথ তৈরি করবে।
