বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

| ৮ কার্তিক ১৪৩২

রাশিয়ার দুই বড়  তেল কোম্পানির ওপর  নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক 

প্রকাশ: ১২:১৩, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

রাশিয়ার দুই বড়  তেল কোম্পানির ওপর  নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি — রসনেফট  এবং লুকঅয়েল  এর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর লক্ষ্য হলো মস্কোকে ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তিচুক্তিতে রাজি করানো।

বুধবার হোয়াইট হাউসে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত জানান।

হোয়াইট হাউসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট্টে-র সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “প্রতিবারই আমি ভ্লাদিমির (পুতিন)-এর সঙ্গে কথা বলি, আলোচনা ভালোই হয়, কিন্তু কোথাও গড়ায় না। কখনোই গড়ায় না।”

এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসে একদিন পর, যখন ট্রাম্প জানান যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।

এর আগের দিন, রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালায়, যাতে অন্তত সাতজন নিহত হন, তাদের মধ্যে শিশু–ও ছিল।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন,“পুতিনের  যুদ্ধ শেষ করতে অস্বীকৃতির কারণেই এই নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন ছিল।”
তিনি আরও বলেন, এই তেল কোম্পানিগুলোই ক্রেমলিনের “যুদ্ধযন্ত্রে অর্থ জোগায়।”

বেসেন্ট আরও বলেন,  “এখন সময় হত্যা বন্ধ করার এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার,” ।

রুট্টের সঙ্গে ওভাল অফিসে যৌথ বক্তব্যে ট্রাম্প জানান, “আমি শুধু চিন্তা করেছিলাম—সময় হয়ে গেছে। আমরা অনেকদিন অপেক্ষা করেছি।”
তিনি এই নিষেধাজ্ঞা “বড় পদক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে রাজি হলে এগুলো দ্রুত তুলে নেওয়া হবে।

রুট্টে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “পুতিনের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করা দরকার ছিল, এবং আজ সেটিই করা হয়েছে।”
ট্রাম্প ও পুতিন সর্বশেষ আগস্টে আলাস্কায় বৈঠক করেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার আশায়। দ্বিতীয় বৈঠকটি এখন স্থগিত হয়েছে।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাবের মধ্যে পার্থক্য বেড়ে যাওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, প্রধান জটিলতা হলো—মস্কো বর্তমান ফ্রন্টলাইন বরাবর যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী।

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যও রসনেফট ও লুকঅয়েল-এর ওপর অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভস বলেন, “বিশ্ববাজারে রুশ তেলের কোনো জায়গা নেই।”

প্রতিক্রিয়ায় লন্ডনে রুশ দূতাবাস জানায়, বড় জ্বালানি কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত করবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জ্বালানি নিরাপত্তায় “গুরুতর প্রভাব” ফেলবে। তারা বলে, “চাপ প্রয়োগ শান্তিপূর্ণ সংলাপকে জটিল করে তোলে এবং উত্তেজনা বাড়ায়।”

রসনেফট ও লুকঅয়েল প্রতিদিন প্রায় ৩.১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি করে, যার মধ্যে রসনেফট একাই রাশিয়ার মোট তেল উৎপাদনের প্রায় অর্ধেকের মালিক — যা বিশ্ব সরবরাহের প্রায় ৬ শতাংশ।

রাশিয়ার প্রধান রপ্তানি পণ্য তেল ও গ্যাস, আর তাদের বড় ক্রেতা হলো চীন, ভারত ও তুরস্ক। ট্রাম্প এই দেশগুলোকে রুশ তেল কেনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার মার্কিন পদক্ষেপকে “অত্যন্ত প্রশংসনীয়” বলে মন্তব্য করেছেন।

ইইউর প্রতিক্রিয়া ও নতুন পরিকল্পনা

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন এক্স-এ (X) পোস্টে জানান, তিনি মার্কিন অর্থমন্ত্রী বেসেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং রাশিয়ার শান্তিপ্রক্রিয়ায় অঙ্গীকারহীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯তম নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্ত শিগগিরই কার্যকর হবে, যেখানে রাশিয়ার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত আছে।

তিনি আরও লিখেছেন, “আটলান্টিকের উভয় দিক থেকে আমরা একত্রে আগ্রাসীর বিরুদ্ধে চাপ বজায় রাখব,”।

এর আগেও যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র গাজপ্রম নেফট ও সুরগুতনেফতেগাস -এর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।

হোয়াইট হাউসে রুট্টে আলোচনা করেন ইউরোপীয় ন্যাটো মিত্র ও কিয়েভের তৈরি ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে।

এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে —
বর্তমান ফ্রন্টলাইন ‘ফ্রিজ’ করে যুদ্ধ থামানো,
নির্বাসিত শিশুদের প্রত্যাবর্তন,
যুদ্ধবন্দিদের বিনিময়,
ইউক্রেন পুনর্গঠনের তহবিল,

ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদের পথ স্পষ্ট করা ও কিয়েভকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা বৃদ্ধি।

ট্রাম্প বলেন, তিনি “অর্থহীন বৈঠক” চান না, কারণ মস্কো যুদ্ধ বন্ধে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

তিনি সোমবার বলেন, “যুদ্ধের লাইনেই থামুক। সবাই ঘরে ফিরে যাক। হত্যা বন্ধ করো, যুদ্ধ বন্ধ করো।”

কিন্তু রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়ে দেন, “রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত — ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দোনবাস অঞ্চল ত্যাগ করতে হবে।”

ট্রাম্প ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে অভিযোগ অস্বীকার করেন যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তিনি একে “ভুয়া খবর” বলেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চান, যুক্তরাষ্ট্র টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করুক—যার ভয় দেখালেও রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনা যেতে পারে বলে তার বিশ্বাস।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন