যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য
সেপ্টেম্বরে ৫০৪ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫০২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬:৪৪, ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:০৩, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

বামে মোজাম্মেল হক চৌধুরী
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ৫০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০২ জন নিহত ও ৯৬৪ জন আহত হয়েছে। পাশাপাশি রেলপথে ৫০টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ও ৩ জন আহত, আর নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত, ১৫ জন আহত এবং ৩ জন নিখোঁজ হয়েছে। সর্বমোট ৫৬৭টি দুর্ঘটনায় ৫৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ৯৮২ জন।
আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন,“বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধনের পরিকল্পনায় গলদ রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের সড়ক দুর্ঘটনা অন্তত দ্বিগুণ হবে।”
বিভাগভিত্তিক দুর্ঘটনা চিত্র
সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে—১২৬টি দুর্ঘটনায় ১২২ জন নিহত ও ২১৬ জন আহত।
সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিভাগে—২২টি দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সর্বাধিক
মোট ১৯১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৯ জন নিহত ও ১৮৮ জন আহত হয়েছে। এটি মোট দুর্ঘটনার ৩৭.৮৯%, নিহতের ৩৯.৬৪% এবং আহতের ১৯.৫০%।
দুর্ঘটনায় নিহতদের পেশাগত পরিচয়
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন—৫ জন পুলিশ, ১ জন সেনাসদস্য,১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১ জন আইনজীবী, ১ জন চিকিৎসক,১২৬ জন চালক, ১০২ জন পথচারী,৬৭ জন নারী, ৪৯ জন শিশু, ৫৬ জন শিক্ষার্থী,৮ জন শ্রমিক, ৮ জন শিক্ষক ও ৭ জন রাজনৈতিক কর্মী
যানবাহনের ধরন অনুযায়ী দুর্ঘটনা
মোট ৭৭২টি দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের বিশ্লেষণে দেখা যায়—
- মোটরসাইকেল: ২৯.০১%
- ট্রাক-পিকআপ-লরি: ২২.০২%
- বাস: ১৬.৫৮%
- ব্যাটারিচালিত রিকশা/ইজিবাইক: ১২.১৭%
- সিএনজি অটোরিকশা: ৭.৩৮%
- নসিমন-করিমন-লেগুনা-ট্রাক্টর: ৭.২৫%
- প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-জিপ: ৫.৫৬%
দুর্ঘটনার ধরন
- গাড়ি চাপা: ৪৮.৮০%
- মুখোমুখি সংঘর্ষ: ২৮.৫৭%
- নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে: ১৭.৮৫%
- অন্যান্য কারণ: ৩.৭৬%
- ওড়না পেঁচিয়ে: ০.৩৯%
- ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ: ০.৫৯%
অঞ্চলভিত্তিক স্থান
- জাতীয় মহাসড়কে: ৪৫.০৩%
- আঞ্চলিক মহাসড়কে: ২৪%
- ফিডার রোডে: ২৫.৩৯%
- ঢাকা মহানগরীতে: ৩.৯৬%, চট্টগ্রামে: ০.৯৯%, রেলক্রসিংয়ে: ০.৫৯%
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ
- ১. বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে গর্তের সৃষ্টি
- ২. মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি ও নসিমনের অবাধ চলাচল
- ৩. রোড সাইন, মার্কিং ও আলোর অভাব
- ৪. মিডিয়ান না থাকা ও অন্ধ বাঁক সৃষ্টি
- ৫. নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও আইন অমান্য
- ৬. উল্টোপথে যানচলাচল ও সড়কে চাঁদাবাজি
- ৭. অদক্ষ চালক ও অতিরিক্ত যাত্রীবহন
- ৮. বেপরোয়া ও বিশ্রামহীন ড্রাইভিং
দুর্ঘটনা রোধে ১২ দফা সুপারিশ
- ১. ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দ্রুত মেরামত করা
- ২. মহাসড়কে রাতের আলোকসজ্জা
- ৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ ও ডিজিটাল ফিটনেস সনদ
- ৪. জাতীয় সড়কে ফুটপাত ও সার্ভিস লেন
- ৫. চাঁদাবাজি বন্ধ ও চালকের বেতন-সময় নির্ধারণ
- ৬. পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা ও রোড সাইন স্থাপন
- ৭. ডিজিটাল ট্রাফিক আইন প্রয়োগ
- ৮. আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক তৈরি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি
- ৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও রোড সেইফটি অডিট
- ১০. মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন স্ক্র্যাপ করা
- ১১. ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে ভ্যাট-কর অব্যাহতি
- ১২. মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, যদি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়, তবে দেশের দুর্ঘটনা পরিসংখ্যান ভয়াবহ রূপ নেবে। তাই সরকারের উচিত নিবন্ধনের আগে নিরাপত্তা নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করা এবং রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।