ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল? আইন উপদেষ্টার কটাক্ষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮:২৩, ১৬ আগস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের মানোন্নয়নে যেখানে জনগণের প্রত্যাশা সর্বাধিক, সেখানে একটি বিতর্কিত কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দেন—“ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল?”
শনিবার রাজধানীর শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএইচসিডিওএ)-এর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
রোগীর অভিযোগ ও ডাক্তারদের দায়
ড. নজরুল বলেন, সাধারণ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রায়শই অযথা বিপুল সংখ্যক টেস্ট করাতে বাধ্য হন এবং নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে বলা হয়। এতে রোগীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“পৃথিবীর কোন দেশে ডাক্তাররা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য নির্দিষ্ট সময় রাখে? দেশের বড় বড় ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে যাচ্ছেন?”
হাসপাতাল কর্মীদের বেতন বৈষম্য
আইন উপদেষ্টা আরও একটি বড় অসঙ্গতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে নার্স ও কর্মচারীরা মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। কম পারিশ্রমিকের কারণে তাদের আচরণে ক্ষোভ ও অনীহা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। অথচ হাসপাতাল মালিকরা কোটি টাকার অট্টালিকায় থাকলেও ন্যায্যভাবে কর্মীদের প্রাপ্য দিতে চান না।
তিনি সোজাসুজি বলেন,“আপনারা লাভ করেন, কিন্তু সেটা ন্যায্যভাবে করুন। যদি শত কোটি টাকা লাভ করেন, তবে অন্তত ১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে কর্মীদের বেতন বাড়ান। এতে সেবার মান বেড়ে যাবে।”
চিকিৎসা সেবার সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা
ড. নজরুল এ সময় দেশের বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার সামর্থ্যও স্বীকার করেন। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, করোনাকালীন সংকটের সময় দেশীয় হাসপাতালগুলো দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। এখন সময় এসেছে সেই আস্থা ধরে রাখার এবং রোগীদের বিদেশমুখী না করে দেশীয় চিকিৎসায় আস্থা জাগানোর।
অনুষ্ঠান ও উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপিএইচসিডিওএ’র প্রেসিডেন্ট ডা. মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন ভূঁইয়া ডাম্বেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক ডা. এ এম শামীমসহ নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আইন উপদেষ্টার প্রশ্ন নিছক ক্ষোভ নয়, বরং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের দুর্বল জায়গাগুলোতে আলো ফেলার একটি প্রচেষ্টা। ওষুধ কোম্পানির প্রভাব, অযথা টেস্ট নির্ভর চিকিৎসা, এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অবহেলার মতো বিষয়গুলো সংস্কারের দাবি রাখে। যদি সত্যিই হাসপাতাল মালিকরা সামান্য লাভ কমিয়ে কর্মীদের বেতন বাড়ান এবং ডাক্তাররা বাণিজ্যিক প্রভাব থেকে মুক্ত হন, তবে দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা শুধু আস্থার জায়গায় পৌঁছবে না, বরং আন্তর্জাতিক মানেরও হয়ে উঠতে পারবে।