প্রধান বিচারপতির প্রশ্নে নতুন বিতর্ক
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরলে সংসদের ক্ষমতা খর্ব হবে?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:০৪, ২২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:২৭, ২২ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে আজ (বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫) তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল সংক্রান্ত মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন—‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরলে, সংসদের ক্ষমতা কি খর্ব হবে?’
এই প্রশ্নটি শুধুই আইনি নয়, বরং রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক বিতর্কের নতুন মাত্রা তৈরি করেছে।
শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপিল বিভাগ সাময়িক সমাধান নয়, বরং নির্বাচনকালীন সরকারের স্থায়ী ও কার্যকর সমাধান খুঁজছে।
তিনি উল্লেখ করেন— ‘গণতন্ত্র যেন বারবার বিঘ্নিত না হয়, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনা এমনভাবে করতে হবে, যাতে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হয়।’
তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন, যদি আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দেয়, তবে তা কখন থেকে কার্যকর হবে—এই নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ নিয়েও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে শুনানি করেন ড. শরীফ ভূঁইয়া।
তিনি আদালতকে জানান, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১২ জন বিচারপতি এই মামলাটি শুনেছেন, যার মধ্যে ৮ জন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন।
তার বক্তব্যে উঠে আসে, আদালত চাইলে একটি ‘গাইডলাইন’ বা নির্দেশিকা দিতে পারেন, যা ভবিষ্যতের সব নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো নির্ধারণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে বলেন, ‘গত দেড় দশকে জনগণ শাসিত হয়নি, বরং শোষিত হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, রাজনৈতিক নিপীড়ন—সবই মানুষের ন্যায়বিচারের বিশ্বাসকে ধ্বংস করেছে। জনগণের এই ক্ষোভ থেকেই বর্তমান গণঅভ্যুত্থান ও পরিবর্তনের সূচনা।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন জনগণ রাজপথে উঠে আসে, তখনই নির্ধারিত হয় কে প্রধান বিচারপতি হবেন, কে সরকারপ্রধান হবেন—এই ক্ষমতা জনগণের, এটিকে অবজ্ঞা করা বিপ্লব ডেকে আনে।’
মামলার পটভূমি
১৯৯৬: সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন।
১৯৯৮: এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের।
২০০৪: হাইকোর্ট রিট খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈধ ঘোষণা করে।
২০০৫: আপিল বিভাগে আপিল দায়ের হয়।
২০১১: আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ১৩তম সংশোধনী বাতিল করে।
২০১১ সালের ৩০ জুন: সংসদে পাস হয় ১৫তম সংশোধনী, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে।
এরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দলীয় সরকারের অধীনে।
কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার দাবি জোরালো হয়।
২০২৪ সালের আগস্টে বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের আবেদন করেন। পরবর্তীতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথকভাবে একই দাবি জানিয়ে আপিল করেন।
এখন চারটি আবেদন একত্রে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি চলছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বেঞ্চ এই গুরুত্বপূর্ণ মামলাটি শুনছেন।
আদালত আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
এখন পুরো দেশের নজর আপিল বিভাগের এই মামলার দিকে—যেখানে নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনব্যবস্থার সাংবিধানিক কাঠামো।