এ বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু তরুণদের ১৫%
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:৫৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০০:৪৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ বছর দেশে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি তরুণরা আক্রান্ত ও মারা গেছে। আক্রান্ত ও মারা যাওয়া এসব তরুণের বয়স ২০-৩০ বছরের মধ্যে এবং মারা যাওয়া শিশুদের বয়স ১০ বছরের নিচে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর গত রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ১৭৯ জনের মধ্যে ১২৪ জনের ‘ডেথ রিভিউ’ (তথ্য পর্যালোচনা) করেছে অধিদপ্তর।
মারা যাওয়া এই ১২৪ জনের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মোট ১৯ জনের বয়স ছিল ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, যা মোট 'ডেথ রিভিউ' এর ১৫ শতাংশ।
এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ১০ বছরের কম বয়সী ১৬ জন শিশুর, যা মোট 'ডেথ রিভিউ' এর ১৩ শতাংশ।
এ ছাড়া ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৭০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে এক জন এবং ৮০ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে এ বছর।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো.হালিমুর রশিদ এই তথ্য জানান।
বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ শক সিনড্রোম
মৃত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বেশিরভাগের ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ ছিল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। আর দ্বিতীয় প্রধান কারণ ছিল এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম।
গুরুতর রোগীকে হাসপাতালে আনতে দেরি করে ফেলায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর ডেঙ্গুতে রবিবার পর্যন্ত ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৮৩১ জনে।
মৃতদের অধিকাংশ হাসপাতালে এসেছে ৩-৬ দিন জ্বরে ভোগার পর
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. মো.হালিমুর রশিদ বলেন, মৃতদের অধিকাংশ ৩ থেকে ৬ দিন জ্বরে ভোগার পর হাসপাতালে এসেছে।
১২৪ জনের মধ্যে ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ জন, ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৫ জন এবং ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির ৭২ ঘণ্টা পর।
তরুণদের বেশি মৃত্যুর কারণ
এ বিষয়ে ডা. হালিমুর রশিদ বলেন, “বয়স কম হওয়ার কারণে কম বয়সী মানুষ জ্বরকে গুরুত্ব দেয় না। বয়স কম হওয়ায় শুরুতে শরীরও এতটা দুর্বল হয় না। দেরি করে হাসপাতালে যখন আসে, ততক্ষণে তারা শকে চলে যায়। এ কারণে তরুণদের মৃত্যু হার বেশি।”
এই চিকিৎসক আরও বলেন, এখন চিকিৎসকের কাছে গেলেই রোগীকে এনএসওয়ান পরীক্ষা করাতে বলে। পরীক্ষায় পজিটিভ এলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এ কারণে আমাদের পরামর্শ জ্বর হলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
বেশি মৃত্যু ঢাকা ও বরগুনায়
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেথ রিভিউ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলাভিত্তিক হিসাবে এ বছর ডেঙ্গুতে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ১৭ জন এবং বরগুনা জেলায় ১২ জন মারা গেছে।
হাসপাতালভিত্তিক হিসাবে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশ্লেষণ বলছে, মৃতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি ৬০ জন। আর ৫৩ জন নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমদ চৌধুরী, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শেখ ছাইদুল হক, পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমুহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।