তরুণদের চিন্তার বিকাশে কাজান যুব সম্মেলন
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩:৪৫, ৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২৩:৫৪, ৯ অক্টোবর ২০২৫

সম্প্রিত রাশিয়ার তাতারস্তানের রাজধানী কাজানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘কাজান আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলন’। এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘বৈশ্বিক পরিবর্তনের যুগে ব্যক্তিত্বের শিক্ষা : মূল্যবোধনির্ভর পেশাগত উন্নয়ন’। এতে অংশ নেন বিশ্বের ৪৫টি দেশের তরুণ প্রতিনিধিদল, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, শিক্ষা ও নৈতিকতার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে গুরুত্বপূর্ণ নানা দিক।
সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে তাতারস্তান সরকার ও ইসলামিক কো-অপারেশন ইয়ুথ ফোরাম (আইসিওয়াইএফ)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাতারস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী লেইলা ফাজলেভা, আইসিওয়াইএফ সভাপতি তাহা আয়হান এবং তাতারস্তান প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা তিমুর সুলেইমানভ।
লেইলা ফাজলেভা বলেন, এই ধরনের আন্তর্জাতিক আয়োজন তরুণদের নীতি ও মূল্যবোধভিত্তিক চিন্তার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি জানান, এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুই শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন, যা সম্মেলনের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে।
প্রথম দিনের আলোচনায় উঠে আসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল যুগে শিক্ষার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা। ‘নতুন মিডিয়া ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হবে?’, এই প্রশ্ন ঘিরে আলোচনা হয় মূল সেশনে। বক্তারা বলেন, প্রযুক্তি যেন শিক্ষাকে পরিপূরক করে, বিকল্প নয়। মানবিক যোগাযোগ, দলগত কাজ ও সমালোচনামূলক চিন্তার জায়গা যেন হারিয়ে না যায়, সে বিষয়েও তারা গুরুত্ব দেন।
আইসিওয়াইএফ সভাপতি তাহা আয়হান বলেন, ‘আমরা এমন এক বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চাই, যেখানে নীতিনির্ধারক, তরুণ ও সুশীল সমাজ একসঙ্গে আলোচনা করতে পারবে। এ বছর গাজা সংকট নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। মুসলিম তরুণদের জন্য এটি শুধু ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নয়, বর্তমান সংকট মোকাবিলারও আহ্বান।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলাম এমন এক মূল্যবোধ দেয়, যা শুধু মুসলিম সমাজের নয়, মানবতার সার্বজনীন মূল্যবোধের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। বিভিন্ন মহাদেশের তরুণরা এই সম্মেলনের মাধ্যমে এক অভিন্ন মানবিক বন্ধনে যুক্ত হচ্ছেন।’
সম্মেলনের অংশ হিসেবে আয়োজিত হয় ‘গ্লোবাল ইয়াং লিডার্স অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠান। এতে সমাজসেবা, গবেষণা, সংস্কৃতি সংরক্ষণ, গণমাধ্যম ও তরুণ নেতৃত্বে অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের তরুণদের সম্মাননা দেওয়া হয়। পাকিস্তানের ড. শারমিন ফাইয়াজ এ বছর ‘ইয়াং পারসন অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পান। তিনি বলেন, ‘এখানকার আলোচনা ও অভিজ্ঞতা আমাদের নতুন প্রজন্মকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করবে।’
ইসলামিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (ওআইসি) সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কবিষয়ক মহাপরিচালক ড. আমিনা ওবায়েদ আলহাজরি বলেন, ‘শিক্ষার ভবিষ্যৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারাই নতুনভাবে রূপ নিচ্ছে। এটি শিক্ষাকে আরও সহজলভ্য ও মানবিক করার সুযোগ তৈরি করছে।’
সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাতারস্তানের প্রেসিডেন্ট রুস্তাম মিনিখানোভ, রাশিয়ার উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ভ্যালেরি ফালকভ ও আইসিওয়াইএফ সভাপতি তাহা আয়হান। মিনিখানোভ বলেন, ‘এই সম্মেলনটি নতুন প্রকল্প, পরামর্শ নেটওয়ার্ক ও আন্তঃদেশীয় সহযোগিতার সূচনা করেছে। শিক্ষা যেন তরুণদের জ্ঞান, উদ্দেশ্য ও সমাজসেবার মানসিকতা গড়ে তোলে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি যেন শিক্ষার নৈতিক নিরাপত্তা, শিশুদের অধিকার ও তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, সৃজনশীলতা ও আজীবন শিক্ষার প্রসারেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। তরুণ প্রজন্মকে পরিবর্তনশীল বিশ্বে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে নিতে নমনীয় ও মূল্যবোধনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় ঘোষণায়।
সূত্র : ডেইলি সাবাহ