বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

| ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

মরক্কোয় তরুণদের আন্দোলন

হাসপাতাল চাই, স্টেডিয়াম নয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭:৫০, ৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৪:০৮, ৫ অক্টোবর ২০২৫

হাসপাতাল চাই, স্টেডিয়াম নয়

ছবি : ইনস্টাগ্রাম

ফুটবল উন্মাদনার দেশ মরক্কো ২০৩০ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনে বিশ্বের বৃহত্তম স্টেডিয়াম নির্মাণ করছে—যার ধারণ ক্ষমতা ১ লাখ ১৫ হাজার দর্শক। কিন্তু দেশজুড়ে তরুণ প্রজন্মের হাজারো মানুষ বলছে, আমরা হাসপাতাল চাই, ফুটবল স্টেডিয়াম নয়।

গত সপ্তাহের শনিবার থেকে প্রতিদিন রাতেই মরক্কোর বিভিন্ন শহরে তরুণদের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে।আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে আছে “জেন জি ২১২” মরক্কোর আন্তর্জাতিক ফোন কোড। এই দলটি ডিসকোর্ড , টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমেরমাধ্যমে সংগঠিত হচ্ছে। তাদের স্লোগান—“No World Cup, health comes first” এবং “We want hospitals, not football stadiums।”
তরুণদের অভিযোগ, সরকার ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে বিশ্বকাপ আয়োজনে, অথচ জনগণ পাচ্ছে না চিকিৎসা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান।

আন্দোলনকারীদের প্রকাশিত দাবিগুলো হলো:

  • সহজলভ্য সরকারি স্বাস্থ্যসেবা
  • স্বল্পমূল্যে আবাসন সুবিধা
  • উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা
  • নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে ভর্তুকি
  • বেতন ও পেনশন বৃদ্ধি
  • তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ
  • ফরাসির বদলে ইংরেজিকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে চালু করা

এই আন্দোলনের জন্ম এক মর্মান্তিক ঘটনার পর—গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণের আগাদির শহরের এক সরকারি হাসপাতালে এক সপ্তাহে আট নারী মারা যান, চিকিৎসা ও সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মরক্কোতে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য মাত্র ৭.৮ জন চিকিৎসক আছেন, যা প্রস্তাবিত মানের এক-তৃতীয়াংশ।

আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে ব্যাপক গ্রেপ্তার চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাশিদ এল খালফি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ৪০৯ জনকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষে ২৬০ পুলিশ ও ২০ জন বিক্ষোভকারী আহত, এবং ৪০টি পুলিশ ভ্যান ও ২০টি ব্যক্তিগত গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

২৫ বছর বয়সী হাজার বেলহাসান বলেন, “আমি দেশ ছেড়ে যেতে চাই না, বরং দেশটাকে ভালো দেখতে চাই। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মৌলিক অধিকার—এগুলো চাইতেই আমরা রাস্তায় নেমেছি।”

আন্দোলনের নেতারা স্পষ্ট করেছেন—এটি কোনো রাজনৈতিক দলনির্ভর আন্দোলন নয়। “আমাদের কোনো নেতা নেই,” বলেন হাজার। “হয়তো এ কারণেই সরকার আমাদের উপেক্ষা করছে।”

তবে সহিংসতার ঘটনায় আন্দোলনকারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এলক্লিয়া শহরে পুলিশ স্টেশনে হামলার চেষ্টা ও তিন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অনেকেই নিজেরাই শহর পরিষ্কার কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

১৯৮১ সালের “ব্রেড মার্টায়ার্স” আন্দোলনের পর এত ব্যাপক তরুণদের রাস্তায় নামা বিরল। ২০১১ সালে 'আরব বসন্তে' সংবিধান সংস্কারের পর এবারই প্রথম মরক্কোতে এমন যুবনেতৃত্বাধীন আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখান্নুশ সংলাপের আহ্বান জানালেও আন্দোলনকারীরা বলেছেন, বক্তব্য নয়, বাস্তব পরিবর্তন চাই।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হাজার বেলহাসান বলেন, “আমরা ফুটবল ভালোবাসি—এটি আমাদের রক্তে। কিন্তু যখন হাসপাতালে অক্সিজেন মেলে না, তখন বিশ্বকাপ আয়োজন গর্ব নয়, ব্যথার।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা চাই বিশ্বকাপ আয়োজক হোক মরক্কো—কিন্তু এমন মরক্কো, যেখানে প্রতিটি মানুষ মাথা উঁচু করে বলতে পারে, ‘আমাদের দেশ প্রথমে নাগরিকদের যত্ন নেয়, তারপর অতিথিদের।’”

সূত্র : বিসিবি

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

পুয়ের্তো রিকোর জালে মেসির আর্জেন্টিনার ৬ গোল
স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার বিতর্কে তোলপাড়
চাকসু নির্বাচন অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ
রোম সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৯ জনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
মিরপুরের আগুন গার্মেন্টসের দ্বিতীয় তলা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার
হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনিসিপিকে প্রতীক নিতে হবে
শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ভারতের ৩ কফ সিরাপ: ডব্লিউএইচও
বুধবার থেকে শুরু অনলাইন জামিননামা প্রক্রিয়া
শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থান
আগামী রবিবার থেকে মাসব্যাপী শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান শুরু