শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

| ৮ কার্তিক ১৪৩২

‘ব্রেইন বিস্ফোরণ’ শঙ্কায় ঘরবন্দি তরুণী!

অন্যরকম ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮:৫০, ২২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৩:২০, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

‘ব্রেইন বিস্ফোরণ’ শঙ্কায় ঘরবন্দি তরুণী!

যেকোনো সময় ‘ব্রেইন বিস্ফোরণ’ হতে পারে বলে শঙ্কিত এক তরুণী। তার ধারণা, বিস্ফোরণ হয়ে মারা যাবেন। তাই এখন ঘরবন্দি থাকেন। ভয়ে তিনি কোথাও বের হন না।

স্কটল্যান্ডের সাউথ ল্যানার্কশায়ারের ৩১ বছরের এই তরুণীর নাম অ্যাম্বার ফোর্ড। তিনি মস্তিষ্কের একাধিক অ্যানিউরিজম নিয়ে বেঁচে আছেন, যা যেকোনো মুহূর্তে ‘বিস্ফোরিত’ হতে পারে।

অ্যাম্বার ফোর্ড দ্য সানকে বলেন, ‘২০১৮ সালে একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমার মুখ বাঁকা হয়ে গেছে। অথচ আমি পুরোপুরি সুস্থ ছিলাম। এটা আমার জীবনকে গ্রাস করে ফেলেছে। ঘর থেকে বের হলেই আমার প্যানিক অ্যাটাক শুরু হয়।’

অ্যাম্বার আরও বলেন, ‘প্রথমে আমার মাম্পস এবং বেলস পালসি ধরা পড়ে, যা সাময়িক দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারপর আর ঠিক হয়নি। এখন আমার রক্ত চলাচল ​​বন্ধ হয়ে গেছে। আমি সবসময় সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছি।

২০২০ সাল থেকে প্রচণ্ড ক্লান্তি, তীব্র মাথাব্যথা, চোখে কম দেখা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। অফিসের টেবিলেই ঘুমিয়ে যেতাম। 

তখন আমার মাথাব্যথা এতোটাই তীব্র হতে শুরু করে যে আমি মাথা তুলতেও পারতাম না। ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে কষ্ট হতো। পায়ের শক্তিও কমে আসছিল।”

অ্যাম্বার জানান, শারীরিক জটিলতার কারণে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি তার অফিসের চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। তখন চিকিৎসক তার ঘাড়ের সিটি স্ক্যান করে প্রাথমিকভাবে গলার ক্যানসার বলে ধারণা করেন। পরে একজন নিউরোসার্জনের পরামর্শ নিলে তার ‘ফেনেস্ট্রেশন’ হতে পারে বলে ধারণা করেন। এই রোগে একটি ধমনী দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।

২০২৪ সালের এপ্রিলে এমআরআই স্ক্যানে তার তিনটি অ্যানিউরিজম বা রক্তনালী ফুলে ওঠা নিশ্চিত হয় বলে জানিয়েছেন স্কটিশ এই তরুণী। চিকিৎসক তাকে বলেছেন, এখন তার ব্রেইনে খুব জরুরি অপারেশন প্রয়োজন। কিন্তু এটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। মস্তিষ্কে রক্ত ​​সরবরাহ বন্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে অক্ষম কিংবা মারাও যেতে পারেন। আবার যেকোনো সময় তা বিস্ফোরিতও হতে পারে।

অ্যাম্বার বলেন, ‘আমি প্রতিমুহূর্তে অসহনীয় উদ্বেগের মধ্যে বাস করছি। আমার মনে হয়, এখন কি ফেটে যাবে? আমি কি আজই মারা যাব—এই চিন্তা সারাক্ষণ তাড়া করে ফেরে।’

তিনি বলেন, ‘যদি আমার অস্ত্রোপচার হয়, তাহলে কি স্ট্রোক, রক্তক্ষরণ ও স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাব? এই চিন্তাও মনে আসে। কারণ, আমার পরিবারে এই রোগটি অনেক আগে থেকেই আছে। আমার দাদি ইসোবেল ও'নিল ৫৬ বছর বয়সে অ্যানিউরিজমে মারা যান।’

অ্যাম্বার বলেন, অ্যাঞ্জিওগ্রাফি না করে তার অবস্থা কতোটা খারাপ তা জানার কোনো উপায় নেই। এক ধরনের এক্স-রে আছে, যা ধমনীতে একটি পাতলা নল ঢুকিয়ে করা হয়, কিন্তু এতে তার স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার মস্তিষ্কের ফেনেস্ট্রেশন বিপজ্জনক নয়, তবে যেহেতু তার অ্যানিউরিজম একই ধমনীতে অবস্থিত, তাই তার অবস্থা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

অ্যাম্বারের সামনে এখন দুটি বিকল্প রয়েছে। রক্ত ​​সরবরাহ চালু রাখতে ধমনিতে কয়েল স্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচার করা, যা তার জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। 

তিনি বলেন, একজন আমেরিকান ডাক্তার খুঁজে পেয়েছি, যিনি জটিল অ্যানিউরিজম নিয়ে কাজ করেন। তিনি এ রকম অনেক জটিল রোগীর অপারেশন করেছেন। কিন্তু তার কাছে গিয়ে চিকিৎসার খরচ বহন করার মতো অর্থ আমার নেই। তাই আমি সবার কাছে আর্থিক সাহায্য চাই।

অ্যাম্বার বলেন, ‘আমি সত্যিই আমার জীবন ফিরে পেতে চাই। একটি পরিবার চাই এবং আমার জীবন উপভোগ করতে চাই।’

মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজম হলো- রক্তনালীর প্রাচীরের দুর্বলতার কারণে তা ফুলে যায়। দুর্বল রক্তনালী দিয়ে রক্ত ​​প্রবাহিত হওয়ার সময় রক্তচাপের কারণে বেলুনের মতো একটি ছোট অংশ বাইরের দিকে বৃদ্ধি পায়। ফলে সাবঅ্যারাকনয়েড রক্তক্ষরণ নামে একটি গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হয়, এতে রক্তপাতে মস্তিষ্কের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। 

লন্ডন ক্লিনিক ও ব্রিটেনের দ্য ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্যমতে, অ্যানিউরিজম হলে হঠাৎ যন্ত্রণাদায়ক মাথাব্যথা হয়, যা অন্ধ করে দেয়। কখনো কখনো ঘাড় শক্ত, বমি হওয়া, খিঁচুনি, আলো সহ্য করতে না পারা, অজ্ঞান হওয়া এবং শরীরের একপাশ দুর্বল কিংবা অবশ হয়ে যেতে পারে। 

ব্রেইন অ্যানিউরিজম কী কারণে হয় তা চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে ধূমপায়ী, উচ্চ রক্তচাপ অথবা পারিবারিকভাবে অ্যানিউরিজমের ইতিহাস আছে, এমন ব্যক্তিদের এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে বছরে প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমে আক্রান্ত হন। সংখ্যার দিক দিয়ে এই আক্রান্তের হার প্রতি ১৫ হাজারে একজন। আক্রান্তদের ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ ২৪ ঘণ্টা মধ্যেই মারা যায়। তাই কারও হঠাৎ এই লক্ষণ দেখা দিলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন