মোটা হওয়ায় বিমানে উঠতে বাধা
অন্যরকম ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩:৩২, ২০ অক্টোবর ২০২৫

অস্বাভাবিক মোটা হওয়ায় এক তরুণীকে বিমানে উঠতে বাধা দিয়েছিলো কাতার এয়ারলাইন্স। তাদের বক্তব্য ছিলো, তার শরীরের তুলনায় বিমানের সিট ছোট। তাই তিনি সিটে বসতে পারবেন না। বিমানে উঠতে না দেওয়ায় তিনি প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েন।
এদিকে, তার অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দুকরা নেতিবাচক সমালোচনা করছেন। তবে, নিন্দুকদের তিনি কড়া জবাব দিয়েছেন। একইসঙ্গে ওজন কমাতে মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইছেন।
বিমানের ওই যাত্রী জেলিন চ্যানি
ছুটি কাটাতে তার পরিবারের সঙ্গে লেবানন গিয়েছিলেন। যদিও তিনি কোনো সমস্যা ছাড়াই বৈরুতে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু গত বছরের ২২ নভেম্বর তাকে ফিরতি ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হয়নি। তিনি তার জন্মভূমি ব্রাজিলে যাওয়ার জন্য দোহা যেতে চেয়েছিলেন। বিমানে উঠতে না দেওয়ায় সাও পাওলোর ফ্লাইট তিনি মিস করেন। তার বোন এবং বোনের ছেলে দেশে ফিরে গেলেও তার মায়ের সঙ্গে তিনি লেবানন থেকে যান। পরে কোনো বাধা ছাড়াই এয়ার ফ্রান্সে করে তিনি দেশে পৌঁছেছিলেন।
২৮ বছর বয়সী সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার জেলিন চ্যানি মধ্যপ্রাচ্যের ওই বিমান সংস্থাটির বিরুদ্ধে শুধু মোটা হওয়ার কারণে তার সঙ্গে সংঘটিত বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ করেন।
ডেইলি মেইলকে চ্যানি জানান, তিনি ১,৩১,১৪০ টাকায় টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু তিনি যখন কাতার এয়ারওয়েজের চেক ইন ডেস্কে যান, তাকে বলা হয়, এই টিকিটে তিনি যেতে পারবেন না। কারণ হিসেবে তারা জানায়, এতো মোটা শরীর নিয়ে আপনি সিটে বসতে পারবেন না। তাকে ৩,৯১,৮৪০ টাকায় বিজনেস ক্লাসের টিকিট কিনতে বলেন তারা। এবং তার কাছে বাড়তি ২,৬০,৭০০ টাকা দাবি করেন। তিনি টিকিট বাতিল করতে চাইলে তারা টাকাও ফেরত দিতে চায়নি।
ইনস্ট্রাগ্রামে দেয়া এক পোস্টে তিনি তার অনুসারীদের বলেন, 'কাতার এয়ারওয়েজের মতো একটি কোম্পানির জন্য মানুষের প্রতি এই ধরণের বৈষম্যের অনুমতি দেওয়া কত লজ্জাজনক! আমি মোটা, কিন্তু আমি অন্য সবার মতোই!'
দ্য সানের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মানুষের স্থুলতা নিরসনের জন্য এই তরুণী লড়াই করে যাচ্ছেন এবং এ নিয়ে তিনি প্রায়ই পোস্ট করেন।
সমালোচকরা তার শরীরের আকারের কারণে তাকে "প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত" করার পরামর্শও দিয়েছেন। তারা বলেছেন, স্যুটকেসের অতিরিক্ত ওজনের জন্য বাড়তি টাকা দিতে হয়। তাই তাকেও অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হবে।
কিন্তু পাল্টা জবাব দিয়ে তিনি বলেছেন, তাহলে এখন আমার শরীরকে লাগেজের সাথে তুলনা করা হচ্ছে?"
তিনি বলেন, ওজন দিয়ে মানুষকে বিবেচনা করা ভীতিকর ও অমানবিক। আমি স্যুটকেস নই।
তিনি বলেন, লাগেজের জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রদান সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। সকল যাত্রীর সাথে ন্যায্য ও সমান আচরণ করা উচিত।
ওয়াশিংটন রাজ্যের কেনেউইকের বাসিন্দা জেলিন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে তিনি তার ওজন কমাতে আর্থিক অনুদান চেয়েছেন।
জেলিন জানিয়েছেন, অন্য একটি ফ্লাইটে ফিক্সড হাতলের আসনে আমাকে বসতে বাধ্য করা হয়েছিলো। ফলে আমার শরীরে ব্যথা ও ক্ষত হয়েছিলো। তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই নিরাপদে ও আরামে উড়তে পারা উচিত।
ডেইলি মেইলের আরেক রিপোর্টে তার অনুসারীদের মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। একজন লিখেছেন, আপনার মোটা স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নেয়া বিশ্বের দায়িত্ব নয়।
আরেকজন লিখেছেন, আপনি আপনার আরামের জন্য লড়াই করছেন।
তৃতীয়জন বলেছেন, আপনি যদি অন্য কোনো যাত্রীর জায়গা দখল করেন, তবে বিমান সংস্থা আপনাকে অতিরিক্ত চার্জ করবে।'
চতুর্থজন মন্তব্য করেছেন, 'নিজের দায়িত্ব নিন। পৃথিবী আপনার চাহিদা পূরণের চারপাশে ঘোরে না।'
কিন্তু অন্যরা তার বক্তব্যের সাথে একমত হয়েছেন, একজন লিখেছেন, আমি ৬ ফুট মাপের মহিলা। আমাকে দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ কমাতে হবে? আপনার পোস্টগুলি খুবই বৈধ!!'
আরেকজন বলেছেন, 'বিদ্বেষীদের কথা শুনবেন না, আপনার পরিবর্তনের দরকার নেই!
অন্য একজন লিখেছেন, আপনি খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক, আমি একজন প্লাস সাইজের মানুষ, আমি খুব আত্মসচেতন এবং ওজন কমানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার শারীরিক অবস্থা ও মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে এটি কঠিন।'
এদিকে, জেলিন বলেছেন, মার্কিন সরকারকে 'ফ্যাট ইকুয়ালিটি বিল অব রাইটস এবং ফ্যাট অ্যাক্সেসিবিলিটি অ্যাক্ট' বাস্তবায়ন করতে হবে। এখন পাবলিক স্পেস সকলের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য করে তোলার সময় এসেছে, আকার যাই হোক না কেন!