সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

| ৫ কার্তিক ১৪৩২

পাকিস্তান-আফগানিস্তান যুদ্ধবিরতি, বাণিজ্যে ‘স্বস্তি’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬:৫৭, ২০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:২০, ২০ অক্টোবর ২০২৫

পাকিস্তান-আফগানিস্তান যুদ্ধবিরতি, বাণিজ্যে ‘স্বস্তি’

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে এক সপ্তাহের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এতে সীমান্তবাসীর জীবনে ফের এসেছে স্বস্তির হাওয়া। সীমান্তের দুই পারের মানুষ—ব্যবসায়ী, দোকানদার, শ্রমিক—সবার মুখে এখন একই কথা, এখন মানুষ অন্তত শ্বাস নিতে পারছে।

খালিজ টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সীমান্তের সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। পাকিস্তানের টরখাম সীমান্তে এখনো আটকে আছে দেড় হাজারেরও বেশি ট্রাক, ট্রেলার ও কনটেইনার, যেগুলোতে রয়েছে সিমেন্ট, ওষুধ, চাল ও অন্যান্য জরুরি পণ্য।

পাকিস্তানের পেশোয়ারে এক শীর্ষ কাস্টমস কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাণিজ্য কার্যত থমকে গেছে।

অন্যদিকে আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুর রহমান হাবিব বলেন, “রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা ফল ও সবজি পচে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যদি এই অবস্থা আরও কয়েক দিন থাকে, তাহলে দাম বেড়ে যাবে, কর্মসংস্থান কমবে এবং বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।”

অক্টোবরের ৯ তারিখে কাবুলে একাধিক বিস্ফোরণের পর থেকেই উত্তেজনা ছড়ায়। তালেবান সরকার এর দায় পাকিস্তানের ওপর চাপায় এবং পাল্টা হামলা চালায় সীমান্তে।

পাকিস্তানও জঙ্গিগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে আফগান ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। এতে দুই দেশের সেনা ও সাধারণ নাগরিক মিলিয়ে বেশ কয়েকজন নিহত হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বুধবার প্রাথমিকভাবে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শুক্রবার পাকিস্তানের নতুন হামলার পর পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অবশেষে রবিবার (১৯ অক্টোবর) কাতারের দোহায় শান্তিচুক্তি আলোচনার পর দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় উভয় পক্ষ।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই যুদ্ধবিরতি “টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি কাঠামো তৈরি করবে”, যদিও বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। সীমান্তের মানুষ এখন সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপ দেখতে চায়।

আফগানিস্তানের স্পিন বোলদাক শহরের গাড়ি বিক্রেতা নিয়াজ মোহাম্মদ আখুন্দ (৩৯) বলেন, “আমাদের জীবিকা পুরোপুরি সীমান্ত বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। যুদ্ধবিরতি মানেই আবার বেঁচে ওঠা।”

একই সুর পাকিস্তানের বাজারকর্মী ইমরান খানের কণ্ঠেও, “দুই দেশই মুসলিম, পশতুন ভাই—তবু আমরা একে অপরের দিকে বন্দুক তাক করি! আমাদের এমন এক প্রক্রিয়া দরকার যা এই সংঘাতের চিরস্থায়ী অবসান ঘটাবে।”

যুদ্ধবিরতির পর সীমান্তের জীবন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। রুটির দোকান খুলেছে, ফলের ঠেলাগাড়ি বেরিয়েছে, বাজারে ফিরেছে ক্রেতা। কিন্তু এখনো ট্রাকগুলো থমকে আছে সীমান্তে—যেন দুই দেশের পারস্পরিক অবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে।

“আগে গুলি চলত, এখন অন্তত রুটি বানাতে পারছি”—বললেন পাকিস্তানের বাঈজাই গ্রামের দোকানদার সাদিক শাহ (৫৬)। “এখন মানুষ শ্বাস নিতে পারছে, শান্তির স্বাদ নিতে পারছে।”, যোগ করেন তিনি।

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন