দূষণে দম বন্ধ লাহোর, দিল্লি-মুম্বাইও শীর্ষে; ঢাকাও তালিকায় সপ্তম
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:২১, ২০ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের লাহোর আবারও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষক সংস্থা আইকিউএয়ার এর তথ্য অনুযায়ী সোমবার সকাল ৮টার দিকে শহরটির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স দাঁড়ায় ২৯৭, যা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে পড়ে। একই সময় বাতাসে দূষিত কণার পরিমান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২২২.৫ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক নিরাপদ সীমার চেয়ে প্রায় ৪৪ গুণ বেশি।
এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো সহজেই মানুষের রক্তপ্রবাহে ঢুকে যেতে পারে—ফলে ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কে জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ে। শিশু, প্রবীণ ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই পরিস্থিতি বিশেষভাবে বিপজ্জনক বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
দূষণে শীর্ষে দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলো
আইকিউএয়ারের তালিকায় লাহোরের পরেই রয়েছে নয়াদিল্লি (২৮৭) ও মুম্বাই (১৮২)। এরপর রয়েছে কলকাতা (১৫৮), তাশখন্দ (১৫৮), জাকার্তা (১৫৪), ঢাকা (১৫২) এবং দুবাই (১৫২)। দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি ভারতীয় শহরই তালিকার শীর্ষ পাঁচে অবস্থান করছে।
রবিবার লাহোরের গড় একিউআই ছিল ১৬০, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে পড়ে। আইকিউএয়ার জানিয়েছে, দূষণের প্রধান কারণ ছিল পিএম ২ দশমিক ২ কণা, যা WHO মানদণ্ডের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লাহোর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ও মেট্রোপলিটন করপোরেশন লাহোর নির্মাণ প্রকল্পে নির্ধারিত পরিবেশবিধি না মানায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
পাকিস্তানের পাঞ্জাবের সিনিয়র মন্ত্রী মারিয়ম আওরঙ্গজেব জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মারিয়ম নওয়াজের নির্দেশে নয়টি বিভাগ মিলে “গ্র্যান্ড অ্যান্টি-স্মগ অভিযান” শুরু করেছে। ইটভাটায় ড্রোন নজরদারি, নির্মাণস্থলে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণ, ও যানবাহনে বিশেষ তদারকি জোরদার করা হয়েছে।
তিনি জানান, সরকারের “অল-অব-গভর্নমেন্ট” কৌশলে প্রথমবারের মতো দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া আধুনিক আবহাওয়া তথ্যকেন্দ্র ‘স্মগ হটস্পট’ আগে থেকেই শনাক্ত করছে, যাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়। ভারী যানবাহন দিনের বেলায় চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে।
লাহোরে দূষণের কারণ ও ইতিহাস
লাহোর বহু বছর ধরেই বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে। দূষণের মূল কারণ—
যানবাহন ও শিল্প কারখানার ধোঁয়া, ইটভাটার কালো ধোঁয়াম ধান ও গম কাটার পর পরিত্যক্ত ফসল পোড়ানো, নির্মাণস্থলের ধুলাবালি, বৃক্ষনিধন ও নগরায়ণ।
শীতকালে (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি) তাপমাত্রা কমে গেলে বাতাসে তাপমাত্রা উল্টোদিকের স্তর তৈরি হয়, যা ধোঁয়া ও দূষণকে আটকে রাখে। ফলে বাতাসে বিষাক্ত পদার্থ জমে ঘন কুয়াশার আকার নেয়।
গত বছর ১৪ নভেম্বর লাহোরের একিউআই একসময় পৌঁছেছিল ১১১০-তে, যা ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’। বাতাসে পিএম ২দশমিক ৫ কণার মাত্রা ছিল ৬৩২ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার—তখন পুরো প্রদেশে স্বাস্থ্যজরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়, স্কুল বন্ধ রাখা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাসে যায় এবং নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, চলতি মৌসুমেও দূষণের ঘনত্ব গত পাঁচ বছরের মধ্যে অন্যতম বেশি এবং কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ‘শ্বাসরুদ্ধকর বিপর্যয়’ আরও তীব্র হতে পারে।