২০ বছরের বামপন্থি শাসনের অবসান
বলিভিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো পাজ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:০৬, ২০ অক্টোবর ২০২৫

দক্ষিণ আমেরিকার রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় পরিবর্তন এনে বলিভিয়ায় দুই দশকের সমাজতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটেছে। রবিবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মধ্য-ডানপন্থি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিসি) প্রার্থী রদ্রিগো পাজ বিজয়ী হয়েছেন।এতে ২০০৬ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা মুভমেন্ট ফর সোশ্যালিজম (এমএএস) দলের যুগের পরিসমাপ্তি ঘটল।
বলিভিয়ার সুপ্রিম ইলেক্টোরাল ট্রাইব্যুনাল (টিএসই) জানায়, ৯৭ শতাংশ ভোট গণনা শেষে পাজ পেয়েছেন ৫৪.৫ শতাংশ ভোট, যা তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ “টুটো” কুইরোগার ৪৫.৪ শতাংশের তুলনায় অনেক এগিয়ে। প্রায় আট মিলিয়ন ভোটার বাধ্যতামূলক ভোটে অংশ নেন এ নির্বাচনে।
৫৮ বছর বয়সী সেনেটর রদ্রিগো পাজ আগামী ৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
২০০৬ সালে ইভো মোরালেসের হাত ধরে বলিভিয়ায় যে বামপন্থি সমাজতন্ত্রের যুগ শুরু হয়েছিল, তা প্রায় দুই দশক পর আজ সমাপ্তির পথে। এই সময়ে এমএএস দল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার, প্রাকৃতিক সম্পদের জাতীয়করণ এবং সামাজিক নিরাপত্তার প্রসারে কাজ করলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্নীতি, মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব বৃদ্ধিতে জনগণের আস্থা হারায়।
রদ্রিগো পাজের জয়কে অনেকে বলিভিয়ার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নীতিতে “মারাত্মক দিকপরিবর্তনের” সূচনা হিসেবে দেখছেন। পাজ তার প্রচারণায় ‘সবার জন্য পুঁজিবাদ’—এই স্লোগান তুলে ধরে কর ও শুল্ক হ্রাস, বিকেন্দ্রীকরণ, এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষালাভ করা পাজ তার বাবা, সাবেক প্রেসিডেন্ট জেইম জামোরার রাজনৈতিক উত্তরসূরি। তিনি দক্ষিণ বলিভিয়ার তারিজা শহরে কাউন্সিলর ও মেয়র হিসেবে কাজ করেছেন এবং ২০২০ সালে নির্বাচিত হন সিনেটর হিসেবে। তার মতে, “রাষ্ট্র নয়, নাগরিকই অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু”—এই দর্শনই তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসের মূল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বলিভিয়ার এই পরিবর্তন দক্ষিণ আমেরিকায় বাম ও ডান শিবিরের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। ভেনেজুয়েলা, কিউবা ও নিকারাগুয়ার মতো বামপন্থি সরকারগুলোর পাশে দাঁড়ানো দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছাকাছি অবস্থান নিতে পারে।
রদ্রিগো পাজ ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, “বলিভিয়া বিশ্ববাজারে তার প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে নতুনভাবে প্রবেশ করবে, তবে নাগরিকের কল্যাণই হবে রাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য।”