ক্যাম্পাসে শেষবারের মতো কফিনবন্দি হয়ে জুবায়েদ
শোক আর ক্ষোভে স্তব্ধ সহপাঠীরা
জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮:১৫, ২০ অক্টোবর ২০২৫

পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ছুরিকাঘাতে নিহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়েদ হোসাইন সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে শেষবারের মতো ফিরে এলেন তার প্রিয় ক্যাম্পাসে- কফিনবন্দি হয়ে।
লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর পরই হাজারো শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পরিবার-স্বজন তাকে শেষবারের মতো দেখতে জড়ো হন। শোক আর ক্ষোভে পুরো ক্যাম্পাস তখন নিস্তব্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্যান্ডেলে বাদ জোহর জানাজা সম্পন্ন হয় জুবায়েদের। এরপর মরদেহ দাফনের জন্য কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়।
শিক্ষকদের বেদনাভরা কণ্ঠ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন বলেন, `জুবায়েদের এই পরিণতি আমরা কেউ কল্পনা করতে পারিনি। আমি তো তাকে অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি দিয়ে সমাবর্তনে গাউন পরিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম, আজ জানাজার আগে তার সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে। জুলাই গণহত্যার পরেও আজ কেন আমাদের শিক্ষার্থীর লাশ ঘন্টার পর ঘন্টা সিঁড়িতে পড়ে থাকতে হয়?’
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একদিনের শোক ঘোষণা করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শোকসভা এবং পরদিন প্রতিবাদ শোভাযাত্রা হবে। আমাদের শিক্ষার্থীর হত্যাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছি খুনিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। এমন এক শিক্ষার্থীর শত্রু থাকতে পারে- এটা বিশ্বাস করা কঠিন।’
বাবার আর্তনাদ
রবিবার রাতেই জুবায়েদ হোসাইনের বাবা মো. মোবারক হোসেন এসেছেন ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে। আজ সোমবার ছেলের নামাজে জানাজা শেষে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে মরে গেছে। একটা ছুরির আঘাতে আমার সকল আশা ভরসা শেষ করে দিছে। আমার ছেলে ছোট বেলা থেকেই একদম শান্ত-শিষ্ট ছিল; পান, বিড়ি, সিগারেট এসব থেকে দূরে ছিল।’
অসহায় বাবা বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে দিয়েছিলাম, আমার ছেলে এই ভার্সিটিতে লেখাপড়া করে অনেক বড় হবে; কিন্তু আমার ছেলে আজ লাশ। এই শোক আমি কিভাবে সইব!’
নিহত জুবায়েদের বাবা বলেন, ‘আমি কাল সারারাত থানায় কাটিয়েও কোনো মামলা করতে পারিনি। আমি প্রকৃত খুনির বিচার চাই। আমার ছেলেকে যে মারছে আমি তার বিচার চাই।’
এসময় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিচার দাবি করে মোবারক হোসেন বলেন, ‘আর কোনো পরিবারকে যেন এরকম কাঁদতে না হয়।’
তদন্তের অগ্রগতি
লালবাগ জোনের ডিসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইনসাফের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্তে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। আগামীকাল সকালেই আমরা আপডেট জানাব।’
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত জুবায়েদ (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন এবং কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সংসদের সভাপতিও ছিলেন। তিনি আরমানিটোলায় এক ছাত্রীকে কোচিং করাতেন। রবিবার বিকেলে ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের বাড়ির নিচে ছুরিকাঘাতে নিহত হন তিনি। পুলিশ বলছে, ছাত্রীটির প্রেমিক ও তার বন্ধুদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটতে পারে। ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।