৫ মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন সাবেক প্রধান বিচারপতির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:৩৩, ২০ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কারাগারে থাকা কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক জামিনে মুক্তির জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। পৃথক পাঁচটি মামলায় নিম্ন আদালতে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি সোমবার (২০ অক্টোবর) হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। তিনি প্রায় তিন মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন।
সোমবার বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ১০২৭ থেকে ১০৩১ ক্রমিক নম্বরে মামলাগুলো ওঠে। আগামী সপ্তাহে আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
খায়রুল হকের আইনজীবী আজ সোমবার সকালে আবেদনের বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
পরে আবেদনকারীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহীন বলেন, পাঁচ মামলায় পৃথক পাঁচটি আবেদন রবিবার (১৯ অক্টোবর) আদালতে জমা দেওয়া হয়, যা আদালতের আজকের কার্যতালিকায় ওঠে। সকালে আবেদনের বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করা হয়। আদালত বলেছেন, আবেদনগুলো শুনানির জন্য আগামী রোববার কার্যতালিকায় আসবে। সেদিন আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যুবদলের কর্মী আবদুল কাইয়ুম হত্যা মামলা এবং রায় জালিয়াতি এবং বিধিবহির্ভূতভাবে একটি প্লট গ্রহণের মামলায় জামিন চেয়ে আবেদনগুলো করেন বিচারপতি খায়রুল হক।
এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। ওই রায়ের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পর গত ২৪ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে গত বছরের ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে করা একটি মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাঁকে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার–সংক্রান্ত রায় জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৭ আগস্ট শাহবাগ থানায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন একটি মামলা করেন। একই অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় গত ২৫ আগস্ট আরেকটি মামলা করেন জনৈক নুরুল ইসলাম মোল্লা। এ ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে প্লট গ্রহণের অভিযোগে চলতি বছরের আগস্টে একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এই পাঁচ মামলায় জামিন চাওয়া হয়েছে বলে জানান আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহীন।
যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম হত্যা মামলা বাতিল ও জামিন চেয়ে গত ৭ আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন খায়রুল হক। গত ১৭ আগস্ট তার আইনজীবীরা আদালতে সময়ের আরজি জানান, যা মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। ওই আবেদন এখন শুনানির অপেক্ষায়।
যে মামলাগুলোতে জামিন চাওয়া হয়েছে-
১. যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম হত্যা মামলা (জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়)।
২. রায় জালিয়াতির অভিযোগে মামলা (শাহবাগ থানা)।
৩. রায় জালিয়াতির অভিযোগে আরেক মামলা (নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা)।
৪. বিধিবহির্ভূতভাবে প্লট গ্রহণের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা।
৫. রায় জালিয়াতি সংক্রান্ত আরেকটি পৃথক মামলা।
গত ২৪ জুলাই, জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছর পর, রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে যুবদল কর্মী হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে রায় জালিয়াতির মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আদালত তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠান, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতির প্রথম রিমান্ড।
এ বি এম খায়রুল হক বর্তমানে কারাগারে আছেন। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, পাঁচ মামলায় জামিনের আবেদন মঞ্জুর হলে তিনি মুক্তি পাবেন। আগামী রবিবার হাইকোর্টে শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।