মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

| ৫ কার্তিক ১৪৩২

বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ২৩:০৫, ২০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০১:৪৭, ২১ অক্টোবর ২০২৫

বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পার্বতীপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলা বিদ্যুৎহীন কিংবা লো-ভোল্টেজের কবলে পড়েছে।

গত রবিবার (১৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টায় যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট। এর আগে গত ১৬ অক্টোবর সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে গভর্নর ভালভ স্টিম সেন্সরের চারটি টারবাইন নষ্ট হওয়ার কারণে কেন্দ্রের ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদুৎকেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটে ওভার হোলিং কাজ ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে প্রায় ৫ বছর ধরে চলছে।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বন্ধ হয়ে যাওয়া তৃতীয় ও দ্বিতীয় ইউনিট এক সপ্তাহের মধ্যে উৎপাদনে যেতে পারছে না। ত্রুটি সারানোর চেষ্টা চলছে।

জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও উত্তরাঞ্চলের চাহিদা পূরণে পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, অন্যদিকে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহে ঘাটতি—এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে ভোগান্তির কবলে পড়েছেন পার্বতীপুর উপজেলার পল্লীবিদ্যুতের ৮০ হাজার গ্রাহক। 

গত এক সপ্তাহ ধরে বেড়েছে ভ্যাপসা গরম; তাপমাত্রার পারদ ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় এই গরমে বেড়ে গেছে লোডশেডিং। সকাল, ভোর কিংবা গভীর রাত—যখন-তখন যাচ্ছে বিদ্যুৎ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্রাহকদের ভুগতে হচ্ছে লোডশেডিংয়ের প্রচণ্ড যন্ত্রণায়।

উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর নয়াপড়া আবু সালেম বলেন, একদিকে গরম। অন্যদিকে রাত দিন সমানতালে লোডশেডিং। এই অবস্থায় সুস্থ থাকাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২-এর পার্বতীপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ‍উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জহুরুল হক বলেন, বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। ছুটির দিন ছাড়া তার জোনে প্রতিদিনের চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট। কয়েকদিন থেকে চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি থাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে করে পল্লীবিদ্যুতের ৮০ হাজার গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। চাহিদার বিপরীতে পাচ্ছি মাত্র ৬-৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ ছাড়া বিদ্যুতের ভোল্টেজ স্থিতিশীল রাখাও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সরবরাহকৃত কয়লার ওপর নির্ভর করে ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বর্তমানে খনির ইয়ার্ডে কয়লা মজুত রয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার মে. টন কয়লা। 

এদিকে, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) পার্বতীপুর কার্যালয় জানিয়েছে, পার্বতীপুর শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ মিলছে ৩ থেকে ৪ মেগাওয়াট। শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। নেসকো’র পার্বতীপুর শহরে বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ৭ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৩ মেগাওয়াট।

এ ব্যাপারে কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বর্তমানে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট ও প্রথম ইউনিটটি মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। কেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালু হলে এ অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেকটা কমবে আসবে। আগামী এক সপ্তাহের পর কেন্দ্রের দুটি ইউনিটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরবে। 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন