‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের’ বিরুদ্ধে আপিল শুনানির তালিকায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩:০৮, ২০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০১:০৮, ২১ অক্টোবর ২০২৫

সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল ছবি
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা দুটি গুরুত্বপূর্ণ আপিল আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় উঠেছে। সে অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে।
এ দুটি আপিলের একটি করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি; আরেকটি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ (২০ অক্টোবর) সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কার্যতালিকায় দেখা গেছে, ‘ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং অন্যান্য বনাম আব্দুল মান্নান খান ও অন্যান্য’ মামলাটি ৬ নম্বরে, আর ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বনাম আব্দুল মান্নান খান ও অন্যান্য’ মামলাটি ৭ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
এই দুটি আপিলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন ও আরও কয়েকটি ইন্টারভেনার আবেদন।
রায়ের পটভূমি ও বর্তমান অবস্থা
২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে।
কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, ওই রায় পুনর্বিবেচনার দাবি ওঠে। গত বছর বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিভিউ আবেদন করেন, পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলও একই আবেদন করেন।
এর পরপরই জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন আলাদাভাবে আবেদন করেন।
গত ২৭ আগস্ট আপিল বিভাগ লিভ মঞ্জুর করে (আপিলের অনুমতি) এবং নির্দেশ দেয়— দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলকারীরা সারসংক্ষেপ দাখিল করবেন, পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীপক্ষও সারসংক্ষেপ জমা দেবে।
রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২১ অক্টোবর শুনানির তারিখ নির্ধারিত হয়, যা এখন কার্যতালিকায় রয়েছে।
মামলার ইতিহাস এক নজরে
১৯৯৬: ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৯৮: আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ কয়েকজন হাইকোর্টে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন।
২০০৪ (৪ আগস্ট): হাইকোর্ট রায়ে সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে।
২০০৫: রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়।
২০১১ (১০ মে): আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়।
২০১১ (৩০ জুন): জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয়; ৩ জুলাই গেজেট প্রকাশিত হয়।
২০২৪ (১৮ ডিসেম্বর): হাইকোর্ট রায় দেয়—পঞ্চদশ সংশোধনীর ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একই রায়ে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল এবং আরও চারটি ধারা বাতিল করা হয়।
বর্তমান বিতর্ক
বিশ্লেষকদের মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার এই আপিল শুনানি বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থার ভবিষ্যৎ দিক নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। এখন প্রশ্ন—আপিল বিভাগ কি ২০১১ সালের রায় বহাল রাখবে, নাকি নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যবস্থা পুনর্বহাল করবে?—সেদিকেই তাকিয়ে সবাই।