প্রধান উপদেষ্টাকে ৬ আন্তর্জাতিক সংগঠনের চিঠি
গুম-খুনের বিচার নিশ্চিত, আ.লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৮, ২১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৫:০০, ২১ অক্টোবর ২০২৫

এইচআরডব্লিউ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত চিঠির একাংশের স্ক্রিনশট
বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নতুন করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রোধে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। এতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সংঘটিত গুরুতর নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত করা, চলমান নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক বন্ধ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই চিঠি রবিবার (১৯ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
চিঠিটি দিয়েছে এইচআরডব্লিউ, বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), বিশ্বজুড়ে নাগরিক সমাজের অধিকার রক্ষায় কাজ করা দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক সংস্থা সিভিকাস, রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠন থাইল্যান্ডভিত্তিক ফোরটিফাই রাইটস, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
ইংরেজিতে লেখা চিঠিটি সমাজকালের পাঠকদের জন্য হুবহু অনুবাদ করে তুলে প্রকাশ ধরা হলো—
“প্রিয় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস:
আমরা আপনাকে আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাতে লিখছি-জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও জুলাই বিপ্লবের এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে— মৌলিক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার, আইনগত সংস্কার শুরু করা এবং গুমসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত শুরু করার ক্ষেত্রে।
২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে এই সীমিত সময়ের মধ্যে আমরা আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি মানবাধিকার সুরক্ষা আরও জোরদার করতে এবং এমন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে, যা মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে এবং ভবিষ্যতে গণতন্ত্রে পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রোধ করবে।
আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে নিরাপত্তা খাত এখনো পুরোপুরি সংস্কার হয়নি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জবাবদিহি ও সংস্কারের প্রচেষ্টায় যথাযথ সহযোগিতা করছেন না।
আগের সরকারের সময়ে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে, তবে একই সঙ্গে চলমান নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে—বিশেষ করে যেসব মামলা আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয় এবং যেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।
রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আপনি বলেছিলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান এবং “তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে” নতুন করে আগত শরণার্থীদের “প্রত্যাবাসনের সুযোগ দিতে হবে।”
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছেন। কিন্তু ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে আসা প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার শরণার্থীসহ সকল রোহিঙ্গার জন্য মিয়ানমারের কোনো অংশই এখনো স্বেচ্ছায়, মর্যাদার সঙ্গে এবং টেকসইভাবে প্রত্যাবাসনের জন্য নিরাপদ নয়।
বাংলাদেশে বসবাসকারী সবার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমরা আপনাকে দ্রুত নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি:
জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে এবং বিগত ১৫ বছরে সংঘটিত গুরুতর নিপীড়নের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করুন। এসব অপরাধের মধ্যে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনা রয়েছে। গুম ও নির্যাতনের জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় র্যাব ও ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে বেসামরিক আদালত আইসিটির এখতিয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনসহ জবাবদিহির এসব প্রচেষ্টায় সেনাবাহিনীর পূর্ণ সহায়তা দেওয়া উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতানির্বিশেষে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়া যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে সম্পন্ন করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য আইসিটিকে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো, সম্পদ ও স্বাধীনতা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আইসিটির অধীন মামলাগুলোসহ সব ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড প্রদান স্থগিত রাখার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা দেওয়া উচিত।
অতীতের ধারা ভেঙে ফেলতে এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্ত করা এবং ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) ক্ষমতা সীমিত করাসহ নিরাপত্তা খাত সংস্কার করুন। দায়মুক্তি নিয়ে র্যাবের গুরুতর অপরাধ সংঘটনের রেকর্ড প্রতিষ্ঠানটিকে সংস্কারের বাইরে নিয়ে গেছে এবং সামরিক বাহিনীর সব কর্মীকে বেসামরিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত।
গুম ও অন্যান্য গুরুতর নিপীড়নে ডিজিএফআইয়ের সম্পৃক্ততা এর ভূমিকা ও ক্ষমতা কেবল সামরিক গোয়েন্দা কাজে সীমিত করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। একই সঙ্গে এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ এবং স্পষ্ট আইনগত ম্যান্ডেট থাকা আবশ্যক।
গুমকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিন এবং গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনকে তাদের ম্যান্ডেট সম্পূর্ণ করতে সহায়তা দিন। অন্তর্বর্তী সরকারকে খসড়া ‘এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স প্রিভেনশন অ্যান্ড রেড্রেস অর্ডিন্যান্স’ গ্রহণ করতে হবে, তবে এর আগে নিশ্চিত করতে হবে যে এটি ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স’সহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে এবং এ ধরনের অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড বাদ দেওয়া হয়েছে।
গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশন যেন তাদের ম্যান্ডেট সম্পূর্ণ করতে পারে, সে জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময় ও সম্পদ পাওয়াটা অন্তর্বর্তী সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে, যার মধ্যে আটক কেন্দ্রগুলোতে অবাধ প্রবেশের নিশ্চয়তা এবং সব প্রাসঙ্গিক নথি দেখার–লাভের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
প্যারিস নীতির আলোকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে (এনএইচআরসি) সংস্কার করতে হবে, যাতে এর কার্যকারিতা নিশ্চিত হয় এবং এর কার্যক্রম, সদস্য নির্বাচন ও অর্থায়নে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে স্বাধীনতা বজায় থাকে।
এনএইচআরসির স্বাধীনভাবে নিরাপত্তা বাহিনী এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা নিপীড়নের অভিযোগ স্বাধীনভাবে তদন্ত করার ক্ষমতা থাকতে হবে এবং এর ম্যান্ডেটকে শুধু দেশীয় আইন অনুযায়ী অধিকারগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত করতে হবে।
সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার সীমিত করতে ব্যবহৃত নিপীড়নমূলক আইনসমূহ; যার মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং দণ্ডবিধির আওতায় ফৌজদারি মানহানি— এসব আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাতিল বা সংশোধন করুন।
অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিল করলেও এর জায়গায় আনা সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫ আন্তর্জাতিক মান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এতে বিভিন্ন অস্পষ্ট ধারা রয়েছে, যেগুলো রাষ্ট্রের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সংশোধন করুন। কারণ, এগুলোতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের জন্য বিরাট ছাড় থাকবে। এসব খসড়া যেন প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও অযাচিত নজরদারি রোধ করা যায়, সে জন্য এগুলোর সংশোধন করতে হবে। অধ্যাদেশগুলো যেন অধিকারভিত্তিক হয় এবং এতে বিশ্বের সেরা চর্চাগুলোর প্রতিফলন থাকে, তা নিশ্চিত করতে অংশীজনদের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপ আবশ্যক।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করুন এবং সাংবাদিকদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক থেকে রক্ষা করুন, তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যা–ই মনে করা হোক না কেন। বিশেষ করে যেখানে অভিযোগের পক্ষে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই অথবা যখন গ্রেপ্তার বা আটকের ঘটনা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা অন্যান্য অধিকার লঙ্ঘন করে।
আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সাংবাদিকদের রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সংস্থা এবং তার বাইরের অন্যদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করার এবং কোনো হামলার ক্ষেত্রে দ্রুত, স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনের সামঞ্জস্যপূর্ণ যেসব সুপারিশ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন করেছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক রোধ করুন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা অন্যান্য মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এমন সব মামলা প্রত্যাহার বা খারিজ করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা করুন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা–নির্বিশেষে ২০২৪ সালের আগস্টের আগে ও পরে দায়ের করা ওই ধরনের সব মামলা পর্যালোচনা ও খারিজ করা। এসব মামলার মধ্যে আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমর্থক যাঁরা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার গ্রহণযোগ্য প্রমাণ ছাড়া দোষী অভিযুক্ত বা আটক রয়েছেন, তাঁদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর বিস্তৃত পরিসরে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন। এ আইনের আওতায় সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অতিমাত্রায় সীমিত করা হয়েছে এবং তা শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমে যুক্ত আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমর্থক হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া জাতিসংঘের সত্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যেমনটি সুপারিশ করা হয়েছিল, ওই প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়— অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফেরার পথ বাধাগ্রস্ত করবে এবং বাংলাদেশি ভোটারদের বড় অংশকে কার্যত বঞ্চিত করবে।
নাগরিক সমাজের সংস্থাগুলোর তহবিল ও কার্যক্রমের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করুন এবং এনজিও–বিষয়ক ব্যুরো সংস্কার করুন। এনজিও–বিষয়ক ব্যুরো অতীতে নাগরিক সমাজের সংস্থাগুলোর ওপর নজরদারি ও হয়রানি করার জন্য রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এগুলোর মধ্যে প্রকল্প ও আন্তর্জাতিক তহবিলের অনুমোদন বিলম্ব বা বাতিল করার মতো বিষয় রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি ভিত্তিতে এনজিও–বিষয়ক ব্যুরো এবং বিদেশি অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে) রেগুলেশন আইন পর্যালোচনা ও সংস্কার করা উচিত, যাতে বিধিনিষেধ ছাড়া আন্তর্জাতিক তহবিল প্রাপ্তি বা অন্য ধরনের অতিরিক্ত নজরদারির অধীনে না থেকে নাগরিক সমাজ স্বাধীনভাবে কার্যক্রম চালাতে পারে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন থেকে রক্ষা করুন এবং তাদের চলাফেরা, জীবিকা ও শিক্ষার স্বাধীনতার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ কমিয়ে দিন।
২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত পালিয়ে আসা দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশে থাকা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার কারও জন্য রাখাইন রাজ্যসহ মিয়ানমারের কোনো অংশ বর্তমানে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য নিরাপদ নয়। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পরিস্থিতি এমন অবস্থায় থাকা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জোর করে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ঠেকানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের শরণার্থীশিবিরে চলাফেরা, জীবিকার সুযোগ এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রবেশের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ কমানো উচিত। যখন অনুদান কমে যাচ্ছে, এমন সময়ে শরণার্থীশিবিরের পরিস্থিতি উন্নয়ন, ত্রাণের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং শরণার্থীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য এসব সুযোগ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ/মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) চলমান তদন্তে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করুন, যার মধ্যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গকে আইসিসি চাইলে তাঁকে গ্রেপ্তার এবং এই আদালতের কাছে হস্তান্তরের মতো বিষয় রয়েছে।
বিনীত,
সিভিকাস
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস
ফোরটিফাই রাইটস
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট