কুকুরের দাম ৭৫ কোটি টাকা
প্রকাশ: ১৩:২৮, ২০ অক্টোবর ২০২৫

৭৫ কোটি টাকায় বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও বিরল প্রজাতির একটি নেকড়ে কুকুর কিনলেন ভারতের এস সতীশ। পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো এই প্রজাতির কোনো কুকুর বিক্রি হলো।
কুকুরের এই প্রজাতিটির নাম ক্যাডাবম্ব ওকামি। একে বলা হয় নেকড়ে কুকুর, যা গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিক্রি হয়েছে। এটি হচ্ছে, অর্ধ-নেকড়ে এবং অর্ধ-ককেশীয় শেফার্ড। এই মুহূর্তে এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি কুকুর।
আসল নেকড়ে এবং ককেশীয় শেফার্ডের মিলন ঘটিয়ে নতুন একটি প্রজাতির জন্ম দেয়া হয়েছে। এবং প্রজাতি সৃষ্টির পর প্রথম বাচ্চাটি কিনলেন সতীশ।
কুকুরের নতুন মালিক ৫১ বছর বয়সী এস সতীশ কর্ণাটকের জওহরলাল বেঙ্গালুরুর একজন বিখ্যাত কুকুর প্রজননকারী। তার কাছে ১৫০ টিরও বেশি দামি কুকুর আছে। এছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণি।
ওকামি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রস প্রজননের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে এবং সতীশ এটি দালালের মাধ্যমে কিনেছেন।
কুকুরটির বয়স এখন মাত্র ১৭ মাস। কিন্তু এরই মধ্যে এর ওজন ৮০ কেজি এবং উচ্চতা হয়েছে ৩৫ ইঞ্চি। এটি প্রতিদিন ৫ কেজি কাঁচা মুরগি খায়।
ইন্ডিয়ান ডগ ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস সতীশ দ্য সানকে জানান, এটি দেখতে হুবহু নেকড়ের মতো এবং অসাধারণ। তাই আমি কুকুরছানাটি কিনতে ৭৫ কোটি টাকা খরচ করেছি। কারণ আমি কুকুরের প্রতি অনুরাগী এবং অনন্য কুকুর সংগ্রহে রাখতে এবং এদের ভারতে পরিচয় করিয়ে দিতে পছন্দ করি।
ককেশীয় শেফার্ডের শরীর পেশীবহুল এবং তুলতুলে। জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান এবং রাশিয়ার মতো ঠান্ডা দেশগুলির কিছু কিছু এলাকায় এগুলোর দেখা মেলে।
এগুলো অবিশ্বাস্য রকমের রক্ষক, বিশ্বাসী এবং প্রভুভক্ত। পাহাড়ের ধারে নেকড়ের আক্রমণ থেকে গবাদি পশুকে রক্ষা করতে এগুলো খুব উপযোগী।
এদিকে, কুকুরটির আগমনে কর্ণাটকে তুমুল আলোড়ন উঠেছে। ইতোমধ্যেই সতীশ চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শোসহ বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল ইভেন্টে একে প্রদর্শন করেছেন।
একটি প্রিমিয়ারের রেড কার্পেটে ওকামির নামার একটি ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিরিশ লাখের বেশি ভিউ হয়েছে বলে সতীশ দাবি করেছেন।
দ্য সান জানায়, সতীশ দশ বছর আগে কুকুরের প্রজনন বন্ধ করে দিয়েছিলেন, এখন আবার নতুন করে শুরু করেছেন। বিরল প্রজাতির এই কুকুর প্রদর্শন করে তিনি যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করছেন। টাকার বিনিময়ে তিনি তার অনন্য কুকুরগুলোকে বিভিন্ন ইভেন্টে প্রদর্শন করেন।
তিরিশ মিনিটের প্রদর্শনের জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং পাঁচ ঘন্টার জন্য সোয়া চোদ্দো লাখ টাকা নিয়ে থাকেন সতীশ।
সতীশ বলেন, মানুষ এই কুকুরটি দেখতে খুব পছন্দ করেন এবং এগুলো প্রদর্শন করে আমি যথেষ্ট অর্থ পাই।
সতীশের সংগ্রহে ওকামিসহ ১৫০ টিরও বেশি কুকুর রয়েছে। এছাড়াও আছে, একটি বিলুপ্তপ্রায় লাল পান্ডা। এটি চীনের লাল এবং সাদা প্রজাতির কিনলিং পান্ডার সাথে আশ্চর্যজনকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ।
গত বছর তিনি এটি ৪০ কোটি টাকায় কিনেছিলেন।
সতীশের সংগ্রহে আছে একটি চৌ চাউ। এটিও তিনি গত বছর ৪১ কোটি ৮ লাখ টাকায় কেনেন।
সতীশের খামারে রয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে দামি দশটি কুকুরের জাত এবং এদের দামও বিভিন্ন রকম।
এদের মধ্যে--
- আফগান হাউন্ড - ৮,৭৫,০০০ টাকা
- ফারাও হাউন্ড - ৯,৩৭,৫০০ টাকা
- ডোগো আর্জেন্টিনো - ১০,০০,০০০ টাকা
- কানাডিয়ান এস্কিমো কুকুর -১০, ৯৩,৭৫০ টাকা
- রটওয়েলার - ১১,২৫,০০০ টাকা
- আজাওয়াখ - ১১,৮৭,৫০০ টাকা
- তিব্বতি মাস্টিফ - ১২,৫০,০০০ টাকা
- চৌ চাউ - ১৩,৭৫,০০০ টাকা
- লোচেন - ১৫,০০,০০০ টাকা
- সামোয়েদ - ১৭,৫০,০০০ টাকা
৭ একর জায়গায় সতীশ একটি প্রাণি সংগ্রহশালা বানিয়েছেন। প্রাণিদের থাকার জন্য সেখানে বানানো হয়েছে, ২০ ফুট বাই ২০ ফুট মাপের আলাদা আলাদা ঘর। কঠোর নিরাপত্তার জন্য চারপাশে ১০ ফুট উঁচু করে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক সিসিটিভির আওতায় নিয়ন্ত্রিত হয় খামারটি।
সতীশ জানান, এদের হাঁটাচলা এবং দৌঁড়ানোর জন্য যথেষ্ট খোলা জায়গা আছে। দেখাশোনার আছে ছয়জন লোক। শহরের আবহাওয়া ঠান্ডা বলে খামারে এয়ার কন্ডিশনারের প্রয়োজন হয় না, জানান সতীশ।
দোকান থেকে কিনে আনা খাবারে স্টেরোয়েড থাকে। এবং এগুলো প্রাণিদের আয়ু কমিয়ে দেয়। সতীশ জানান, তাই আমার সব কুকুরকে কাঁচা খাবার খাওয়াই।
সতীশের খামারে প্রতিদিন অনেক লোক আসেন। তারা তার সাথে ছবি ও সেলফি তোলেন। এবং এতে তিনি আনন্দ উপভোগ করেন।
সিনেমার একজন বড় অভিনেতা যেভাবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তার চেয়েও বেশি মনোযোগ পাই, বলেন তিনি।