বিজিবির অভিযানে ১৭০ রোহিঙ্গা আটক, মাঝিদের কাছে হস্তান্তর
শহিদুল ইসলাম, উখিয়া-টেকনাফ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১:২২, ৭ অক্টোবর ২০২৫

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবির থেকে বাইরে আসা নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ১৭০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা অভিযানে তাদের আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন।
সূত্র জানায়, আটক রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৮৮ জন পুরুষ, ৫০ জন নারী ও ৩২ জন শিশু রয়েছে। তারা সবাই উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছিলেন। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কাজের খোঁজে বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তারা ক্যাম্প থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েন।
আটকের পর বিজিবি সদস্যরা নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মাঝিদের জিম্মায় তাদের হস্তান্তর করেন।
টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন,“রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে ক্যাম্পের বাইরে চলে আসায় স্থানীয় এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে মানবপাচার, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, চুরি, খুন-গুমসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন,“স্থানীয় জনগণ আতঙ্কে রয়েছে, সামাজিক স্থিতিশীলতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে এবং এ ধরনের তৎপরতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”
জাদিমুড়া ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি ইসমাইল বলেন,“প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং, মিটিং ও সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জানানো হচ্ছে— তারা যেন ক্যাম্পের বাইরে না যায়। কিন্তু তারপরও কেউ চিকিৎসা, কেউ দিনমজুরির কাজ কিংবা মাছ ধরার মতো কারণে বাইরে চলে যায়। বিজিবি তাদের আটক করে আমাদের জিম্মায় দেয়।”
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের শিবিরে বসবাস করছেন। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
যদিও বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান স্থানীয় অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সামাজিক ভারসাম্যে চাপ সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন,“রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে এসে স্থানীয় বাজার ও কৃষিজমিতে কাজ করছে। এতে আমাদের শ্রমবাজারে চাপ পড়ছে। পাশাপাশি চুরি, ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধও বাড়ছে।”
বিজিবি ও প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পের ভেতরে নজরদারি ও বাইরে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। বাইরে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বিজিবির পক্ষ থেকে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে—আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ক্যাম্প ছাড়ার চেষ্টা করলে বা বাইরে অবস্থান করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযান ভবিষ্যতেও নিয়মিত চলবে।”