ক্লিনারের হাতে নারীর অস্ত্রোপচার, প্রাইভেট হাসপাতাল সিলগালা
প্রকাশ: ১৯:২১, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
সিলগালা করে দেওয়া সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতাল। ফাইল ছবি
ফরিদপুরের সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে ক্লিনার নিয়ামুল শেখের বিরুদ্ধে একজন নারী ক্যান্সার রোগীর অস্ত্রোপচারের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটি সিলগালা করেছে জেলা প্রশাসন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান গেটের পশ্চিম পাশে শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশের ক্লিনিকটিতে অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিন্টু বিশ্বাস বলেন, ক্লিনার নিয়ামুলকে দিয়ে অস্ত্রোপচার, অপারেশন থিয়েটারের ফ্রিজ বন্ধ থাকা এবং ভেতরে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়ায় ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সিভিল সার্জন মাহামুদুল হাসান জানান, ডেপুটি সিভিল সার্জন বদরুদ্দোজাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৮ নভেম্বর হাসপাতালটিতে চিকিৎসক দেখাতে যান সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামের সৌদি প্রবাসী সরোয়ার আলমের স্ত্রী ববিতা বেগম (২৮)। স্তনের অসুস্থতা নিয়ে তিনি চিকিৎসক আতিকুর আহসানকে দেখাতে যান। চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালের মাধ্যমে বায়োপসি পরীক্ষার কথা বলেন।
অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হওয়ার পর হাসপাতালের ওটি কক্ষের দায়িত্বে থাকা ক্লিনার নিয়ামুল শেখ তাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে হাসপাতালে যেতে নিষেধ এবং নিজেই ওই ক্লিনিকে স্তনের টিস্যু সংক্রামক পরীক্ষার (বায়োপসি) জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করেন।
ভুক্তভোগী ববিতা বেগম বলেন, অস্ত্রোপচারের পর নিয়ামুল তাকে চারটি সেলাই দেন এবং নিজেই প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। ঘটনার ১৫ দিন পর অস্ত্রোপচারস্থলে মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দেয়। ৪ ডিসেম্বর ফরিদপুর সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসকের মাধ্যমে তার সংক্রমিত স্তনের একটি বড় অংশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। বর্তমানে তিনি ওই ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।
ফমেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ইউনিট প্রধান আতিকুর আহসান বলেন, ‘ওই নারীকে অপচিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। যিনি এই কাজটি করেছেন, তিনি এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নন। পুরোটাই অপচিকিৎসা ও ভুল চিকিৎসায় হয়েছে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমি জানতে পেরেছি’।
সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের সবার অজান্তে তিনি এই কাজটি করেছেন। তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব’।
নিয়ামুল শেখ দুঃখ প্রকাশ এবং ভুল কাজ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
