জিয়ার আমল থেকে খেলাপি ঋণ শুরু: রেহমান সোবহান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২:০৭, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
জিয়ার আমল থেকে খেলাপি ঋণ শুরু: রেহমান সোবহান। ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের বার্ষিক সম্মেলনে ‘উন্নয়ন ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনায় অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের সংকট শুরু হলেও তা নিয়ে সংসদে কখনোই যথাযথ আলোচনা হয়নি এবং সরকারের নীতিমালা, দুর্নীতি ও উন্নয়ন কর্মসূচির বিষয়গুলো সংসদে কার্যকরভাবে উঠে আসেনি।
তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমানের শাসনামল থেকেই বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের সমস্যা শুরু হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ বছর পার হওয়ার পরও সংসদে এর যথাযথ বা জোরালো আলোচনা করা হয়নি। এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় করতে গেলে বাস্তবিক অর্থে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।”
তিনি সংসদকে ‘অকার্যকর’ উল্লেখ করে বলেন, বাজেট অধিবেশনের সময় বিরোধী দল প্রায় সবসময় তা বর্জন করত। এর ফলে সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনা কখনো সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “আমাদের উন্নয়ন সংকট, সুশাসনের অভাব এবং সামগ্রিক সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো–এমন কোনো সংসদ আমরা পাইনি যেখানে ক্ষমতাসীন সরকারকে তাদের নীতিমালা, দুর্নীতি বা ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি আনা সম্ভব হয়।”
রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশের সংসদ মূলত ‘অভিজাতদের দ্বারা, অভিজাতদের জন্য’ পরিচালিত হচ্ছে। তিনি উদাহরণ হিসেবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেন। সেই সময়ের প্রার্থীরা সাধারণ পরিবহন ব্যবহার করতেন এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বড় সম্পদ প্রয়োজন হতো না। কিন্তু আজ, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে পাজেরো গাড়ি থাকা আবশ্যক, এবং নির্বাচিত হলে সেই গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধা হিসেবে পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, সরকারের অর্থনৈতিক নীতি, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং দুর্নীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংসদে যথাযথ আলোচনার আওতায় আসে না। বিরোধী দলকে বাজেট অধিবেশন বর্জনের জন্য তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।
রেহমান সোবহান মন্তব্য করেন, “এমন অবস্থায় দেশের জনগণ কখনোই সরকারের দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারছে না, ফলে আমাদের উন্নয়ন সংকট এবং দুর্নীতি দূর হচ্ছে না।”
তিনি রাজনৈতিক সংস্কৃতির উদাহরণ হিসেবে যোগ করেন, দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করার জন্য কার্যকর সংসদ অপরিহার্য। তিনি বলেন, এই অভাবের কারণে রাষ্ট্রের নীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রায়শই সীমিত ও অভিজাতদের প্রভাবিত করে পরিচালিত হয়।
সম্মেলনের আলোচনায় রেহমান সোবহান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার ওপর গভীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সরকারি নীতিমালা, বাজেট এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সংসদে যথাযথ বিতর্ক ও পর্যবেক্ষণ না থাকায় দেশের অর্থনীতি ও সমাজের মূল সমস্যাগুলো সমাধান হচ্ছে না।
