ঋণের ফাঁদে বাংলাদেশ: এনবিআর চেয়ারম্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:৪৭, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, “আমরা ইতোমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছি।“ ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, “আমরা ইতোমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছি। এই সত্য স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।”
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এবং ‘এসডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫’ প্রকাশ করা হয়।
সেমিনারে দেশের ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নীতিনির্ধারক, অর্থনীতিবিদ ও সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, যথাযথ সংস্কার না হলে ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা না ফিরলে বাংলাদেশ দ্রুতই গভীর ঋণ সংকটে নিমজ্জিত হতে পারে।
সেমিনারে সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান সতর্ক করে বলেন, “সংস্কার ছাড়া রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব না হলে বাংলাদেশ ঋণের ফাঁদে পড়ে যাবে। তখন ঋণ নিয়ে আবার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।”
তিনি জানান, রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের তালিকায় একসময় সরকারি কর্মচারীদের বেতন–পেনশন ছিল শীর্ষে এবং কৃষি ও শিক্ষা খাত দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু এখন ঋণের সুদ পরিশোধই রাজস্ব ব্যয়ের প্রধান খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আক্ষেপ করে বলেন, “কয়েক বছর আগেও আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ১০ শতাংশের বেশি, এখন তা ৭ শতাংশের ঘরে। জিডিপির সব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না—এটাই মূল সমস্যা।”
তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এনবিআরকে দুই বিভাগে বিভক্ত করে দুজন সচিবের নেতৃত্বে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। আমানতকারীদের সুরক্ষায় ডিপোজিট গ্যারান্টি ১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। এক–দুই সপ্তাহের মধ্যেই অর্থ বিতরণ শুরু হতে পারে।
তিনি বলেন, “এই উদ্যোগের ফলে পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকসহ প্রায় ৭৬ লাখ পরিবার টাকা ফেরত পাবেন। নতুন ব্যাংকটি প্রথম বা দ্বিতীয় বছরেই মুনাফায় ফিরবে বলে আমরা আশা করছি।”
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ বিভাগের সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির অতিরিক্ত সচিব মনিরা বেগম।
