স্মৃতির মিনারে কারি আবদুল বাসিত
মাইসারা জান্নাত
প্রকাশ: ২০:২৭, ১ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২০:২৮, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
কারি আবদুল বাসিত। ছবি: সংগৃহীত
মিশরে জন্ম নেওয়া এক কিংবদন্তির কণ্ঠের জাদুতে মোহিত হয়েছে বিশ্ব। তিনি আর কেউ নন, কারি আবদুল বাসিত। গত ৩০ নভেম্বর রবিবার মিসরের আওকাফ মন্ত্রণালয় এই মহান ব্যক্তির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জীবনী ও কর্মময় জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
বিংশ শতাব্দীর এই মহান কারিকে বলা হয় গোল্ডেন থ্রোট বা স্বর্ণকণ্ঠ এবং ভয়েস অফ মক্কা। তার শক্তিশালী কণ্ঠস্বর আজও কোটি মানুষের হৃদয়ে কোরআনের সুর তরঙ্গ ছড়িয়ে দিচ্ছে। আওকাফ মন্ত্রণালয় তাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা কোরআনিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করেছে।
মিসরের দক্ষিণে আল-মাজাইজা গ্রামে ১৯২৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন এই বিশ্ব বিখ্যাত কারি। তার পরিবার ছিল কোরআনের আলোয় আলোকিত। তার দাদাও ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ও কোরআনের হাফেজ। মাত্র ১০ বছর বয়সেই আবদুল বাসিত পবিত্র কোরআন সম্পূর্ণ মুখস্থ করেন।
বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী এই বালক মাত্র ১২ বছর বয়সে কোরআনের সাত কিরাত এবং ১৪ বছর বয়সে দশ কিরাত আয়ত্ত করেন। খুব অল্প সময়েই মসজিদ ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তার তিলাওয়াত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৯৫১ সালটি ছিল তার জীবনের মোড় ঘোরানো অধ্যায়। ১৯ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো তিনি কায়রোতে পা রাখেন এবং সাইয়্যেদা জয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা মসজিদে কোরআন তিলাওয়াত করেন। সেই মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন কারি আবদুল ফাত্তাহ শাশাঈ, কারি মুস্তফা ইসমাইল এবং কারি আবুল আইনাইন শুয়াইশার মতো দিকপালেরা। নির্ধারিত ১০ মিনিটের জন্য মঞ্চে উঠলেও শ্রোতাদের মুগ্ধতা ও অনুরোধে তিনি দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তিলাওয়াত করেন। তার সুমধুর সুর, কন্ঠের ওঠানামা এবং তাজবিদের নিখুঁত গাঁথুনি উপস্থিত জনতাকে এক অলৌকিক আবেশে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। ওই বছরই তিনি মিসরের জাতীয় বেতারে কো্রআন তিলাওয়াত শুরু করেন।
পবিত্র কোরআনের বাণী ছড়িয়ে দিতে তিনি বিশ্বের নানা প্রান্তে সফর করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় একবার তার তিলাওয়াত শুনতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিল। মসজিদ ছাড়িয়ে সেই জনস্রোত রাজপথে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৫২ সালে তিনি পবিত্র হজ পালন করেন এবং মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববীত কোরআন তিলাওয়াতের সৌভাগ্য অর্জন করেন। তার হৃদয়স্পর্শী তিলাওয়াত শুনে বহু অমুসলিম ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। লস এঞ্জেলেসে ৬ জন এবং উগান্ডায় ১৬৪ জন অমুসলিমের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১৯৮৮ সালের নভেম্বরে ডায়াবেটিস ও লিভারজনিত অসুস্থতায় ভুগে মহান এই কারি ইন্তেকাল করেন। তার জানাজায় অংশ নেন হাজারো ভক্ত এবং কায়রোতে অবস্থিত বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূতেরা। মৃত্যুর এত বছর পরেও সুরা কদরের মতো তার অসংখ্য তিলাওয়াত আজও মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি জোগায়।
