পরিবারসহ আওয়ামী লীগ নেতার ৬৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০:৫০, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী এবং তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও জামাতার ‘অবৈধভাবে অর্জিত’ ৬৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৩ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ফরিদপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাড. বিজন কুমার বোসের আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন রাজবাড়ীর বিশেষ জজ মো. আনিসুর রহমানের আদালত।
পরে আদালত প্রাঙ্গনে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ্যাড. বিজন সাংবাদিকদের জানান, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে কাজী ইরাদত আলীসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের সম্পদের অনুসন্ধান করছেন ওই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। প্রাথমিক অনুসন্ধানে কাজী ইরাদত আলী, স্ত্রী রাবেয়া পারভীন, ছেলে কাজী রাকিবুল ইসলাম শান্তনু, মেয়ে কাজী সিরাজুম মনিরা ও জামাতা মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ৬৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৩ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পায় দুদক।
অবৈধভাবে অর্জিত এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে, রাজবাড়ী গোল্ডেশিয়া জুট মিল ও পেট্রোল পাম্প, রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন সম্পদ।
প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিয়ে দুদকের কর্মকর্তা আদালতকে জানান, কাজী ইরাদত আলীসহ পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদ হস্তান্তর করে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপনের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর বা রুপান্তর বা হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা তাদের নামে অবৈধ উপায়ে অর্জিত ব্যাংক হিসাবগুলো নগদায়ন ও স্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আরও জানা গেছে, কাজী ইরাদত আলীর নিজ নামে ঢাকা ও রাজবাড়ীর ১০টি হিসাবে এক কোটি ৬৫ লাখ ৮৭ হাজার ৮২২ টাকা, স্ত্রী রাবেয়া পারভীনের সাতটি ব্যাংক হিসাবে এক কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার ৪৯৪ টাকা, ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কাজী রাকিবুল ইসলাম শান্তনুর ১৩টি ব্যাংক হিসাবে ৪৬ লাখ ৬৫ হাজার ২১৮ টাকা, পুত্রবধূ আফসানা নওমী তাকিনার আটটি হিসাবে ১১ লাখ ১১ হাজার ১১১ টাকা, মেয়ে কাজী সিরাজুম মুনিরার ১১টি ব্যাংক হিসাবে দুই কোটি ৩ লাখ ৮১ হাজার ২১২ টাকা এবং জামাতা মো. নুরুল ইসলামের ১০টি ব্যাংক হিসাবে এক কোটি ৯০ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৫ টাকা রয়েছে।
এ ছাড়া কাজী ইরাদত আলীর পারিবারিক ডেভেলপার কোম্পানি মিডল্যান্ড লিমিটেডের নামে ছয়টি ব্যাংক হিসাবে দুই কোটি আট লাখ ৯১ হাজার ৬৭৫ টাকা, ব্যবসায়িক হিসাবে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ১৩৯ টাকা, পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন মেয়াদে এক কোটি ৪৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং পরিবারের সদস্যদের নামে দুই কোটি ২০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের সাতটি গাড়ি রয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে কাজী ইরাদত আলী ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে স্থাবর সম্পদের মধ্যে ভূমি, দালান, ফিলিং স্টেশনসহ ৫২ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৭ টাকার সম্পদেরও উল্লেখ করা হয়েছে।
