রাজনৈতিক দুরদর্শিতায় নন্দিত তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৭, ২০ নভেম্বর ২০২৫
তারেক রহমান। ফাইল ছবি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন আজ বৃহস্পতিবার ২০ নভেম্বর। শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তিনি।তার ডাকনাম ‘পিনো’।
তবে তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা, পোস্টার, ব্যানার লাগানো ও আলোচনা সভাসহ কোনো ধরনের আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান বা উৎসব পালন না করতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিএনপির সব ইউনিটের নেতাকর্মীদেরকে দলটির পক্ষে থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যারা এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা ভাবছেন, তাদের অর্থ দান করার জন্য বলা হয়েছে।
জন্ম শৈশব শিক্ষা
তারেক রহমান ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তারেক রহমানের শৈশব শুরু হয় একটি বিনয়ী পরিবেশে। সরল জীবনযাপন ছিল তার পরিবারের মূলমন্ত্র। স্কুলে যাওয়ার বয়সে, তার বাবা-মা তাকে ঢাকা সেনানিবাসের শাহীন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন। তখন একটি ইংরেজি-মাধ্যমিক স্কুল ছিল, যেখানে কেবল সেনা সদস্যদের সন্তানদের জন্য উন্মুক্ত ছিল।
মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতকোত্তর করেন। তারেক রহমান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এক অত্যন্ত অস্থির পরিস্থিতিতে, যখন তার মা বেগম খালেদা জিয়া এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
থানা বিএনপির সদস্য দিয়ে শুরু রাজনীতির
তারেক রহমান মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলার গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হন। আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনে যোগ দেওয়ার আগেই তিনি রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারেক রহমান তার মা খালেদা জিয়ার সহচর হিসাবে সারা দেশে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন।
২০০১ সালের নির্বাচনেও মায়ের পাশাপাশি তারেক রহমান দেশব্যাপী নির্বাচনি প্রচারণা চালান। এই নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতির প্রথম সারিতে তার সক্রিয় আগমন ঘটে।
২০০২ সালে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এরপরই দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। মূল সংগঠনসহ যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে তৃণমূল সভা আয়োজন করেন। মূলত এই জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মাঝে তারেক রহমান শুধু প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিতি থেকে বেরিয়ে এসে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।
কারাগার থেকে লন্ডন
ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়ে তাকে কারাগারে যেতে হয়, নির্যাতনের শিকার হতে হয়। একপর্যায়ে চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডনেও যেতে হয়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তিনি দল পরিচালনায় সম্পৃক্ত হতে থাকেন। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝেও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেন তারেক রহমান। তবে সেখানেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকার উচ্চ আদালতের মাধ্যমে এক আদেশে তার বক্তব্য-বিবৃতিও প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যা গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের আগ পর্যন্ত ছিল।
২০০৯ সাল থেকে দলের নেতৃত্বে
২০০৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে এবং ২০১৬ সালে ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে তারেক রহমান দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে যুক্তরাজ্য থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সেখান থেকে সব সময় ভার্চুয়ালি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, নেতাকর্মীদের প্রতি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।
আগামী মাসে পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বগুড়া-৬ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এটিই তার জীবনের প্রথম নির্বাচনে অংশ নেওয়া।
দাম্পত্যজীবন
তারেক রহমান ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান, সাবেক যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের মেয়ে ডা. জোবাইদা রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র মেয়ে জাইমা রহমান সম্প্রতি লন্ডনের কুইনমেরি ইউনিভার্সিটি থেকে আইন শাস্ত্রে ল’ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।
লন্ডন থেকেই দিচ্ছেন নেতৃত্ব
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে যুক্তরাজ্য থেকেই তারেক রহমান সব সময় ভার্চুয়ালি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের গত প্রায় ১৬ বছর বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, খুন-গুম-নির্যাতন সত্ত্বেও তারেক রহমানের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার কারণে দল ছিল ঐক্যবদ্ধ।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের উৎখাতের পর তিনি জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রয়াস চালাচ্ছেন। বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি ঐক্যের বার্তা দিচ্ছেন, পেশিশক্তির উত্থানের পরিবর্তে জনমানুষের পক্ষে কাজ করে জনসমর্থন সৃষ্টির বার্তা দিচ্ছেন। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিএনপিরই প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তিনি বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের প্রতি নৈতিক রাজনৈতিক চর্চার কঠোর বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। তার এ উদ্যোগ ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিবেশের গুণগত পরিবর্তনের গোড়াপত্তন করবে বলে মনে করেন নেতারা।
তারা জানান, বিএনপির মতো সর্ববৃহৎ দলের গুণগত পরিবর্তনের উদ্যোগ অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তিসহ জাতীয় রাজনৈতিক পরিসীমায় এক নবতর সাম্য ব্যবস্থার সৃষ্টি করবে।
রাজনৈতিক দুরদর্শিতায় দলে নন্দিত
তার দূরদর্শী রাজনীতির ভূয়সী প্রশংসা করেন দলের নেতারা। তাদের মতে, গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইতিবাচক ও পরিবর্তনের রাজনীতি জাতির সামনে নতুনভাবে আশার সঞ্চার করছে। মানুষের মন জয় করতে তিনি নিচ্ছেন একের পর এক যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। তার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনা জনগণ গ্রহণ করেছে। বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রেখে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসাবে এক অনন্য জায়গায় নিয়ে গেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এর সুফল পাবেন দেশবাসী।
