জাপা চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
সরকারে থাকা দলীয় উপদেষ্টা ও ব্যক্তিদের বদলাতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮:৪৫, ২২ অক্টোবর ২০২৫

জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন আয়োজনের আগে অবশ্যই সরকারের মধ্যে থাকা দলীয় উপদেষ্টা ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের বদলানোর দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেছেন, কারণ দল নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া কোনভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেছেন, কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তির উপর নয়, ড.ইউনুসকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে দায়িত্ববোধের উপর। আর সে দায়িত্ববোধ হল একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।
উপজেলা দিবস উপলক্ষে বুধবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে হাওলাদার টাওয়ার জাতীয় পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সকালে (বুধবার) আইআরআই প্রতিনিধিরা আমার কাছে জানতে চেয়েছে, জাতীয় পার্টি নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে কিনা। উত্তরে আমি বলেছি, আমরা নির্বাচন অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখেছে। আমাদেরকে প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয় না। নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্রচারণা করতে পারছি না। সরকার বলেছে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু এখনো সে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। এ অবস্থায় আমরা কিভাবে নির্বাচন অংশগ্রহণ করবো?
ব্যারিস্টার আনিস বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলছেন, আগামী নির্বাচন সবচেয়ে সুন্দর গ্রহণযোগ্য হবে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার উপর বিশ্বাস এবং আস্থা রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান যে পরিস্থিতি তা দেখলে কোনভাবেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক হবে।
ব্যারিস্টার আনিস আরও বলেন, বর্তমান সরকার সংস্কারের কথা বলছে। তারা উপজেলাকে শক্তিশালী করতে চায়। সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমতা পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের নেতা প্রয়াত এরশাদ উপজেলা পদ্ধতি চালু করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি সে পদ্ধতি বাতিল করে। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলো উপলব্ধি করেছে সাধারণ মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য উপজেলার বিকল্প নেই। তাই তারা আবার উপজেলা পদ্ধতি চালু করেছিল। কিন্তু ৩৫ বছরেও উপজেলাকে শক্তিশালী করা হয়নি। বর্তমান সরকার উপজেলাকে শক্তিশালী করার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে সেজন্য আমি ধন্যবাদ জানাই।
আলোচনা সভায় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, বলেন, আগামী নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু , নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে নির্বাচনের পর গঠিত পার্লামেন্ট ক্ষণস্থায়ী হবে। তাই আমি প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করবো, যাতে করে নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে হয় সে ব্যবস্থা করার জন্য।
হাওলাদার বলেন, আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সে মামলা এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। তাহলে আমরা কিভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করবো। সরকার যদি মনে করে, জাতীয় পার্টিসহ সকল দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ জরুরী, তাহলে দ্রুত আমাদের মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিতে হবে।নির্বিঘ্নে সভা সমাবেশের সুযোগ দিতে হবে।
হাওলাদার আরো বলেন, জাতিসংঘে গিয়ে প্রফেসর ইউনুস বলেছিলেন, ছাত্ররা তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। কিভাবে তিনি এ কথা বলেছিলেন, আমার বোধগম্য হচ্ছে না। জুলাই আগস্ট বিপ্লবে ছাত্র জনতা সকলেই রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে।
জাপা মহাসচিব আরও বলেন, প্রফেসর ইউনুস যে ছাত্রদের কথা জাতিসংঘে বলেছিলেন, তাদের কথাও তিনি আর শুনছেন না। সে ছাত্ররাও প্রফেসর ইউনুস সরকারের সমালোচনা করছে। এতে প্রমাণ হয় রাজনীতিতে চিরশত্রু বা চির বন্ধু কেউ নয়। তাই আমি ডক্টর ইউনুসকে অনুরোধ করবো, আপনি কোনো বিশেষ পক্ষ অবলম্বন না করে, দেশ এবং দেশে মানুষের স্বার্থে এমন একটি নির্বাচন উপহার জাতিকে দেন, যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। এবং সারা দুনিয়াতে আপনার সুনাম অক্ষুন্ন থাকবে।
ড.ইউনুসকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে হাওলাদার বলেন, এরশাদ সাহেব আপনাকে গ্রামীণ ব্যাংক দিয়েছিলেন। সে ব্যাংকের মাধ্যমে আপনি নোবেল প্রাইজ পেয়ে নিজে যেমন সম্মানিত হয়েছেন, তেমনি দেশও সম্মানিত হয়েছে। সেই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে অন্তত জাতীয় পার্টির ব্যাপার আপনি নিরপেক্ষ হবেন- এটি প্রত্যাশা করি।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- পার্টির সিনিয়র কো- চেয়ারম্যান এডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান এডভোকেট মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য বীরমুক্তি যোদ্ধা অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন প্রমুখ।