বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

| ১৩ কার্তিক ১৪৩২

গণভোট নিয়ে স্পষ্ট করলো প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

নির্বাচনের ‘আগে বা পরে’ জুলাই সনদের গণভোটের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭:৩৬, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৪৭, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

নির্বাচনের ‘আগে বা পরে’ জুলাই সনদের গণভোটের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা আগে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজন ও সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। 

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালায় এমন সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। 

তবে এ সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের বক্তব্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আলী রিয়াজ সুপারিশ হস্তান্তরের পর ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, “সাংবিধানিক আদেশ দেওয়ার পর এবং জাতীয় সংসদে সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকার যেন গণভোট অনুষ্ঠান করে, আমরা এটা লিখিতভাবে বলেছি। এর বাইরে আমরা সরকারকে আজ বলেছি, অবিলম্বে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে আলাপ আলোচনা করে একটি তফসিল, (গণভোট) নির্বাচনের তফসিল তৈরি করে ফেলে।”

পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক স্পষ্টীকরণ বার্তায় বলা হয়, “ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজের একটি বক্তব্য থেকে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আসলে তিনি বলেছেন, নির্বাচনের দিনসহ তার আগে যে কোনো দিন সরকার জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোটের আয়োজন করতে পারে— এই মর্মে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ দিয়েছে।”

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ওই ব্রিফিংয়ে দেওয়া বাকি তথ্য নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে কোন সংশোধনী আসেনি। 

ওই ব্রিফিংয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তনের জন্য ‘জনগণের ক্ষমতা’ যেন ব্যবহৃত হয়, সেই প্রস্তাব করেছেন তারা।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, “গণভোটের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এখনও আছে। এ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন এবং গণভোট অনুষ্ঠান সকলেই মনে করেছে সবার অংশগ্রহণের জন্য এটা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যকীয়। সে বিবেচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গণভোটের প্রস্তাব বা সুপারিশ করেছে।”

তবে ওই আদেশ জারির পর কোন দিন গণভোট হবে, সে সিদ্ধান্ত সরকার নেবে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, “সরকারকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য বলেছি।”

গত ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হয়। সংস্কার উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে জুলাই সনদে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা থাকায় আলাদাভাবে আলোচনা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে। সেই সুপারিশমালা মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেয় ঐকমত্য কমিশন।

জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিল। আর বিএনপিসহ কয়েকটি দল এর বিরোধিতা করে আসছিল।

গণভোট কবে, কীভাবে হবে তা নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা ছিল। জামায়াতসহ কয়েকটি দল ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরেই গণভোট চায়। অন্যদিকে এ দুই বিষয়ে প্রবল আপত্তি আছে বিএনপির। নভেম্বরে গণভোটের দাবির মধ্যে ‘অন্য কোনো মাস্টারপ্ল্যান’ আছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন বিএনপি নেতারা।

গণভোট কীভাবে হবে- সেই বিবরণ দিয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে আলী রীয়াজ বলেন, “সরকার একটি আদেশ করবেন। সেই আদেশের অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে একটি মাত্র প্রশ্ন থাকবে। তবে ওই আদেশের তফসিলে যে ৪৮টি বিষয় আছে, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার বিল আকারে প্রস্তুত করেও জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন।

আলী রিয়াজ বলেন, “যখন বিল হিসেবে উপস্থাপিত হবে এবং গণভোটের মধ্য দিয়ে জনগণের সম্মতি লাভ করা যায়, তাহলে ওই বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাজে সহযোগিতা করবে।”

তিনি বলেন, “সংবিধান সংস্কারের জন্য যে পরিষদ তৈরি হবে, সেই পরিষদ জুলাই জাতীয় সনদের স্পিরিটকে ধারণ করে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন সংযোজন পরিবর্জন পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে এই বিল যেহেতু জনগণের দ্বারা অনুমোদিত হয়, তাহলে এটা তাদের সাহায্য করবে।"

সংবিধান সংশোধনের যে বিষয়গুলোতে জনগণ গণভোটের মাধ্যমে সম্মতি দেবে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ যদি ২৭০ দিনের মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে তাদের দায়িত্ব সম্পাদন করতে না পারে, তাহলে গণভোটে পাস হওয়া বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোকে প্রতিস্থাপন করবে।

২৭০ দিন দায়িত্ব পালনের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার কার্যক্রম সমাপ্ত করবে। জাতীয় সংসদের সদস্যরাই সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হবেন।

আলী রিয়াজ বলেন, “আমরা প্রস্তাব করেছি, জাতীয় সংসদের সদস্যরা একাদিক্রমে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে আলাদাভাবে শপথ গ্রহণ করবেন। সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার নিজস্ব রুলস অফ প্রসিডিউর তৈরি করবে।”

তিনি বলেন, "জাতীয় সংসদের যিনি স্পিকার হবেন, তিনি সংবিধান পরিষদের সভাপতিত্ব করবেন। তার অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার ওই পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তাদের উভয়ের অনুপস্থিতিতে সংস্কার পরিষদে গঠিত সভাপতি প্যানেল থেকে সভাপতিত্ব করবেন।”

“আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন এবং কোনো অবস্থাতেই এমন পরিস্থিতির সূচনা হবে না যে সরকারের দেওয়া বিলগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে। আমরা এটা আস্থা রাখতে চাই।"

বিস্তারিত পড়ুন : জুলাই সনদের খসড়া

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

তিন বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্যা শোকজ নয়, তথ্য চাওয়া হয়েছে
স্বর্ণের দামে বড় পতন এক দিনে ভরিতে কমল ১০ হাজার টাকার বেশি
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা অবাক হলেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিবকে পাল্টা প্রশ্ন না করায়
১০ রেফারির বাজি প্রায় ২০ হাজার ম্যাচে...!
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার হাতে
ব্যানার ছেঁড়ার জেরে বন্দুকযুদ্ধ: চট্টগ্রামের ছাত্রদল কর্মী নিহত, আহত ১৫ জন
অন্য প্রতীক দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে ইসি
বন্ধ হতে পারে ৪ কোটি নাগরিকের খাদ্য ভর্তুকি
যুক্তরাষ্ট্রে টানা চার সপ্তাহ ধরে শাটডাউন বন্ধ হতে পারে ৪ কোটি নাগরিকের খাদ্য ভর্তুকি
ত্রয়োদশ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ৪২৭৬১ ও ভোটকক্ষ ২৪৪৬৪৯
‘শাপলা’ পাচ্ছে না এনসিপি অন্য প্রতীক দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে ইসি
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে আগ্রহ পাকিস্তানের
নিউইয়র্কে আগাম ভোটে এগিয়ে মুসলিম মেয়রপ্রার্থী মামদানি
কার্যক্রম চলমান থাকবে, নভেম্বরের মধ্যে শেষ নয়
দুই দশক পর ঢাকায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান জেইসি বৈঠক শুরু
নয়াদিল্লি-বেইজিং উষ্ণতায় ফিরছে চালু হলো ভারত -চীন সরাসরি ফ্লাইট