শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

মৎস্য খাতে টেকসই উন্নয়নে নেদারল্যান্ডসের দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা

কক্সবাজারে আইপিআরএস প্রযুক্তির উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ১৬:৪৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০৩:৫৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মৎস্য খাতে টেকসই উন্নয়নে নেদারল্যান্ডসের দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা

বাংলাদেশের মৎস্য খাতের টেকসই উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে নেদারল্যান্ডস সরকার। বিশেষ করে কৃষি ও জলজ চাষে নতুন প্রযুক্তি, বিনিয়োগ এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহায়তা করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশে দেশটির দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত জোরিস ভ্যান বোমেল।

সম্প্রতি কক্সবাজারের একটি স্থানীয় হোটেলে আয়োজিত ইন-পন্ড রেসওয়ে সিস্টেম (আইপিআরএস) প্রযুক্তির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রযুক্তির উদ্বোধন করেন।

আইপিআরএস প্রযুক্তি কী?

ইন-পন্ড রেসওয়ে সিস্টেম (আইপিআরএস) হলো আধুনিক, স্বয়ংক্রিয় এবং পরিবেশবান্ধব মাছ চাষ প্রযুক্তি। এতে খামারের পানির ধারাবাহিক পরিশোধন হয় এবং আলাদা করে পানি পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে না। বর্জ্য পানিতে সরাসরি মিশে না গিয়ে সংগ্রহ হয় এবং কৃষিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ফলে খামারিরা সহজে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং টেকসই পদ্ধতিতে চাষ চালাতে সক্ষম হবেন।

নেদারল্যান্ডসের সহায়তা ও বাস্তবায়ন

ফুডটেক বাংলাদেশ প্রোগ্রামের অধীনে এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে পরিচালিত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ল্যারিভ ইন্টারন্যাশনাল ও আন্তর্জাতিক কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স।

দেশব্যাপী ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ (সিওই) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আইপিআরএস প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে ক্ষুদ্র মৎস্য চাষীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সুযোগ সৃষ্টি হবে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং জাতীয় পর্যায়ে টেকসই মৎস্য উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, “আইপিআরএস প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষের ঘনত্ব ও উৎপাদন দুটোই বাড়ানো সম্ভব। আমাদের দেশে এটি বড় পরিসরে প্রয়োগ করা গেলে টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।”

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জোর দিয়ে বলেন, “ক্ষুদ্র চাষিরা যাতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডি হিউসের রপ্তানি পরিচালক (এশিয়া) জর্ডি ড্রাইটেলার এবং লাইটক্যাসল পার্টনার্সের কর্মকর্তারা।

মৎস্য খাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

বাংলাদেশের জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান প্রায় ২.৫৩% এবং কৃষিজ জিডিপিতে অবদান প্রায় ২২.২৬%। প্রায় ২ কোটি মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করে আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক আইপিআরএস প্রযুক্তি বাংলাদেশের মৎস্য খাতকে নতুন অগ্রযাত্রার পথে নিয়ে যাবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন