ত্বকে ফুটে ওঠে ডায়াবেটিসের আগাম লক্ষণ
স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:৫১, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
ডায়াবেটিসকে অনেকেই ‘নীরব ঘাতক’ বলেন। কারণ রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলেও বেশিরভাগ সময় শরীর কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় না। কিন্তু ত্বক—আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ—অনেক আগেই সতর্কবার্তা পাঠাতে শুরু করে। রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হওয়া, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়া—এসব কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের ত্বকে দেখা যায় নানা পরিবর্তন। কখনও কখনও এগুলোই হয়ে ওঠে ডায়াবেটিসের প্রথম সংকেত।
ত্বকের সেই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো আগে থেকেই চিনে নিতে পারলে সহজেই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এবং সম্ভাব্য বিপদ এড়ানো সম্ভব।
ডায়াবেটিসে যে ৬টি ত্বক-সংকেত কখনও অবহেলা করা উচিত নয়
১. পায়ের সামনের দিকে ছোট বাদামি দাগ
পায়ের সামনের অংশে ছোট গোল বাদামি বা লালচে দাগ দেখা দিলে তা ডায়াবেটিক ডার্মোপ্যাথি হতে পারে। রক্তে শর্করা বেড়ে ক্ষুদ্র রক্তনালীর ক্ষতি হলে এই দাগ তৈরি হয়। অনেকেই এটি অবহেলা করেন, অথচ এটি ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ।
২. ঘাড় বা বগলে কালো, মসৃণ-মোটা দাগ
ঘাড়ের পিছনে, বগলে বা কুঁচকিতে গাঢ়, রুক্ষ, ভেলভেটের মতো ত্বক—এই লক্ষণ সরাসরি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সঙ্গে যুক্ত। ওজন বৃদ্ধি, হরমোন সমস্যা এবং প্রিডায়াবেটিসেও এটি দেখা যায়। ব্লাড সুগারের আগাম সতর্কবার্তা হিসেবে বিশেষজ্ঞরা এটিকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ বলেন।
৩. পিঠ–কাঁধের চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া
ডায়াবেটিস দীর্ঘদিন অযত্নে থাকলে ত্বক ধীরে ধীরে শক্ত, ঘন ও টানটান হয়ে যায়। হাত-পা নড়াতে অস্বস্তি হয়। এটি ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার ইঙ্গিত।
৪. ক্ষত সারতে দেরি হওয়া
রক্তে সুগার বেশি থাকলে ক্ষুদ্র ধমনীর রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়। ফলে ছোট ক্ষত, কাটাছেঁড়া শুকাতে দেরি হয়, সংক্রমণও বাড়ে। বিশেষ করে পায়ের ক্ষত অবহেলা করলে ডায়াবেটিক ফুট আলসার হতে পারে—যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
৫. ত্বকে হঠাৎ ছোট হলুদ দানা
রক্তে শর্করার পাশাপাশি ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে গেলে ত্বকে ব্যথাযুক্ত ছোট হলুদ দানা ওঠে। সাধারণত উরু বা হাতে গুচ্ছাকারে দেখা যায়। এটি শরীরে লিপিড বিপর্যয়ের গুরুতর ইঙ্গিত এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা প্রয়োজন।
৬. চোখের পলকে বা ঘাড়ে হলুদ প্যাচ
চোখের পলক বা ঘাড়ে হলুদ চর্বিযুক্ত দাগ—যাকে অনেকে সৌন্দর্য সমস্যা মনে করেন—আসলে রক্তে অতিরিক্ত চর্বি ও শর্করার অস্বাভাবিকতার ইঙ্গিত হতে পারে। এটি ডায়াবেটিস বা উচ্চ লিপিড মাত্রার সতর্কতা।
ত্বকের এই পরিবর্তনগুলো অবহেলা করলে ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস আরও জটিল আকার নিতে পারে। তাই এমন কোনও লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করুন। আগাম সতর্কতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
