বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

| ৭ কার্তিক ১৪৩২

জবির জুবায়েদ হত্যা

কারণ ‘ত্রিভুজ প্রেম’, বলছে পুলিশ 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭:০৮, ২১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:৩৯, ২১ অক্টোবর ২০২৫

কারণ ‘ত্রিভুজ প্রেম’, বলছে পুলিশ 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডের মুল কারণ ‘ত্রিভূজ প্রেম’ বলে মনে করছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, জুবায়েদের ছাত্রী বর্ষার সাথে মাহির নামে এক ছেলের প্রেম ছিল। আবার বর্ষা জুবায়েদের প্রেমেও পড়ে। বিষয়টি মাহির জানলে বর্ষাকে জুবায়েদের থেকে সরে আসতে চাপ দেয়। আর বর্ষা জানায় জুবায়েদকে সরিয়ে দিতে। এমন অবস্থায় চিরতরে সরিয়ে দিতেই বর্ষা ও মাহির পরিকল্পিতভাবে জুবায়েদকে হত্যা করে। 

তবে এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক বিষয় জড়িত নয় বলেও দাবি করেছে পুলিশ। তাদের মতে, স্রেফ ‘ত্রিভূজ প্রেমের’ কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীতে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। 

এসময় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্) এস, এন, মো. নজরুল ইসলাম জানান, জুবায়েদ হত্যায় এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- জুবায়েদের ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা, বর্ষার প্রেমিক মাহির রহমান ও মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান। 

এসময় অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনাটির সঙ্গে বরগুনার রিফাত হত্যায় তার স্ত্রী মিন্নির জড়িত থাকার ওই ঘটনার সমাঞ্জস্য পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, "এখানে রাজনৈতিক কোন বিষয় নেই। এটা পুরোপুরি ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী। আমরা রাজনৈতিক কিছু পাইনি।"

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, পাশাপাশি বাড়ি বর্ষা ও মাহিরের। তাদের একসাথে বেড়ে ওঠা ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল দেড় বছরের। আর জুবায়েদ মেয়েটিকে তার বাড়িতে যেয়ে পড়াতেন প্রায় এক বছর ধরে। একপর্যায়ে জুবায়েদ ও বর্ষা- উভয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। তখন মাহিরের সঙ্গে বর্ষার সম্পর্কের অবনতি চলছিল। 

প্রায় একমাস আগে মাহির জানতে পারে যে, জুবায়েদের সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক আছে। বিষয়টি মেনে নিতে না পারার মাহির-বর্ষার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয়।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মেয়েটি তখন তার পুরনো প্রেমিককে বলে, ‘জুবায়েদকে না সরাতে পারলে তোমার থাকতে পারব না'। এমন প্রেক্ষিতেই তারা জুবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

যেভাবে হত্যার পরিকল্পনা

অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যার পুর্বপরিকল্পনা অনুযায়ি জুবায়েদের পড়াতে আসার এবং চলে যাওয়ার সময় মাহিরকে জানিয়ে দেয় বর্ষা। এরপর ছেলেটি তার বন্ধু আয়লানকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি জানায় এবং তারা দুজনে কেরাণীগঞ্জ থেকে 'হত্যায় ব্যাহৃত' ৫০০ টাকা দিয়ে সুইচ গিয়ার চাকু কিনে আনে। ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মেয়েটির বাসার নিচে জুবায়েদকে পেয়ে তার প্রেমিক ও আয়লান তাকে ধরে। এবং জুবায়েদের সঙ্গে তার ছাত্রির প্রেমের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। এ নিয়ে 'বাকবিতণ্ডার' এক পর্যায়ে প্রেমিক তার ব্যাগে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু বের করে জুবায়েদের গলার ডান পাশে পোচ দেয়, যাতে তার মৃত্যু হয়।”

ওই রাতেই মেয়েটিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, পরদিন বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যার সময় সিঁড়িতেই দাঁড়িয়েছিল মেয়েটি

হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনার সময় মেয়েটি তার বাসার তৃতীয় তলায় দাঁড়িয়ে ছিল বলে জানান পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী। তিনি বলেন, "ছুরিকাঘাতের পর জুবায়েদ সিঁড়ি বেয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে মেয়েটিকে দেখতে পায়। তখন তার কাছে জুবায়েদ বলেছিল 'আমাকে বাঁচাও'।

"এর জবাবে মেয়েটি বলেছিল, 'তুমি না সরলে আমি আমার প্রেমিকের হব না'। এ কারণে বর্ষা কোন হেল্প করেনাই, এরমধ্যে জুবায়েদ পড়ে গেছে।"

ছুরিকাঘাতের পর সিঁড়ির নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত রক্ত পড়েছিল। তিনতলার সিঁড়িতে উপুড় হয়ে পড়েছিল নিথর জুবায়েদ।

কেন বর্ষা এমন করলো

সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, "মেয়েটি দুইদিকেই সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। ছোট মানুষ, তার আগের প্রেমিক ব্যাপারটা জানার পর হয়ত চাপ দিয়েছে। এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই মেয়েটি ও তার আগের প্রেমিক মিলে জুবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে।"

পুলিশ জানায়, বর্ষা পড়তো ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে। আর মাহির পুরান ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বর্ষে।

জুবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।

রবিবার রাত থেকে যা ঘটলো

রবিবার রাতে জুবায়েদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্র ঘটনাস্থলে জড়ো হন তার সহপাঠী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিচারের দাবিতে তারা বিক্ষোভ করেন।

এরপর পুলিশ ওই বাসায় ওই ছাত্রী বর্ষা ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারপর রাত ১১টায় ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

পরে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রাত পৌনে ১১টার দিকে তাঁতীবাজার এলাকায় প্রধান সড়ক অবরোধ করে। প্রায় এক ঘণ্টা রাস্তা আটকে রাখার পর রাত পৌনে ১২টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে বংশাল থানার দিকে রওনা হয়। পরে সেখানে অবস্থান করে টায়ার পুড়িয়ে তারা বিক্ষোভ দেখান।

এদিকে এই হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে রবিবার সন্ধ্যা থেকেই মাহিরের নাম এবং ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর সোমবার সকালে মাহিরের মা রেখা আহমেদ ছেলেকে নিয়ে গিয়ে বংশাল থানায় হস্তান্তর করে বলে তার স্বজনেরা জানিয়েছেন।

কিভাবে খুন হলো জুবায়েদ

জুবায়েদ হত্যা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, “জুবায়েদ হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করতেন। প্রতিদিনের মত তিনি রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বংশাল থানার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নুর বক্স লেনের ১৫ নম্বর হোল্ডিং রৌশান ভিলায় তার ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য যান। সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে মেয়েটি জুবায়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই সৈকতকে ফেইসবুকের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে জানান যে, জুবায়েদ স্যার খুন হয়েছে। কে বা কারা খুন করেছে।”

সন্ধ্যা ৭টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. কামরুল হাসান মামলার বাদী জুবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিষয়টি জানান। এনায়েত হোসেন তার শ্যালক শরীফ মোহাম্মদকে সাথে নিয়ে মোটর সাইকেলে ওইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থল রৌশান ভিলায় পৌঁছান।

মামলার বিবরণে এনায়েত হোসেন সৈকত বলেন, “ঘটনাস্থলে গিয়ে রৌশান ভিলা ভবনের নিচতলা থেকে উপরে উঠার সময় সিঁড়ি ও দেয়ালে রক্তের দাগ দেখা যায়। ওই ভবনের তৃতীয় তলার রুমের পূর্ব পাশে সিঁড়িতে গেলে সিঁড়ির ওপর জুবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উপুড় অবস্থায় দেখা যায়। সুরতহাল প্রস্তুত করার সময় তার গলার ডান পাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে জেনে এবং আশপাশের এলাকার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে উল্লিখিত আসামিরাসহ অজ্ঞাত বিবাদীরা আমার ভাইকে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার ডান পাশে আঘাত করে হত্যা করেছে বলে নিশ্চিত হই।

এনায়েত আরও অভিযোগ করেন, “পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। মামলায় যারা প্রকৃত আসামি আমরা তাদের নাম উল্লেখ করেছি। আমরা চাই কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন ফেঁসে না যায়। যারা প্রকৃত অপরাধী তারাই শাস্তি পাক।”

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

শেখ হাসিনার আইনজীবী চৌধুরী মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচার চেষ্টা করছেন
তত্ত্বাবধায়কের মুডে যেতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে: আমীর খসরু
দূর্ঘটনার কবলে ভারতের প্রেসিডেন্ট মুর্মুর হেলিকপ্টার
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রিজন ভ্যানে মানবতাবিরোধী মামলায় ট্রাইবুনালে সেনা কর্মকর্তারা
বিবিসি ও ইবিইউর নতুন গবেষণা প্রকাশ সংবাদভিত্তিক প্রশ্নে অর্ধেক সময় ভুল তথ্য দেয় এআই মডেল
গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ পলাতকদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন
বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকাই দাবি