বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

| ৬ কার্তিক ১৪৩২

মধ্যরাতে উত্তাল বুয়েট

ধর্ষণের অভিযোগে বুয়েট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:০৩, ২২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৪:০৫, ২২ অক্টোবর ২০২৫

ধর্ষণের অভিযোগে বুয়েট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডডিট আইডি ব্যবহারকারী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এক সহপাঠীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ওই শিক্ষার্থীর বোরকা, হিজাব ও নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার (২২ অক্টোবর) মধ্যরাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়ে বুয়েট। 

বুধবার (২২ অক্টোবর) রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল ও ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার করার দাবিতে বুয়েট কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন ডিএসডব্লিউ ভবনের (ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর) সামনে জড়ো হয়। 

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম শান্ত রায়। তিনি বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং আহসানউল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রাতেই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ জারি করেন বুয়েট কর্তৃপক্ষ।  

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, রেডডিট আইডি ব্যবহারকারী ওই শিক্ষার্থী নারী সহপাঠীকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ধর্ষণ করেছে। এছাড়াও বোরকা, হিজাব ও নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে সে। এমন একজন আমাদের সহপাঠী হতে পারে না। আমাদের দাবি আমরা তার বহিষ্কার চাই এবং তার ধর্ষণের বিচার করতে হবে।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অভিযুক্ত শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে বুয়েট ২১ ব্যাচের প্রকাশিত ধর্ষণ ও প্রমাণের মিলসমূহ হলো-

১) রেডডিট ব্যবহারকারী নিজেকে ‘বুয়েট ইইই-২১’-এর শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

২) একাধিক মন্তব্যে সে বাসইউস ব্র্যান্ডের এয়ারবাডস ব্যবহার করেন বলে উল্লেখ করেছেন- যা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর সঙ্গেও মেলে।

৩) রেডডিট আইডি থেকে জানা যায়, সে জুন মাসে মুস্টাং, নেপাল সফর করেছেন। একই সময়ে (৩ জুন) শ্রীশান্ত রায় তার ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসটাং থেকে ছবি পোস্ট করেছেন।

৪) উক্ত রেডডিট আইডির অশালীন মন্তব্যগুলির ভাষা, টোন ও লেখনশৈলী বহু সহপাঠী শনাক্ত করেছেন, যা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর স্বভাবগত লেখনভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৫) যখন বুয়েট শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি-বর্জনের পক্ষে সম্মিলিত স্বাক্ষর প্রদান করেন, তখন একমাত্র সেই কাগজে স্বাক্ষর করেননি- যা তার দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। 

উল্লিখিত প্রমাণ ও মিলের ভিত্তিতে আমরা দৃঢ়ভাবে সন্দেহ করছি যে আমাদের ব্যাচের শ্রীশান্ত রায়ই উক্ত রেডডিট আইডির ব্যবহারকারী এবং সে-ই সচেতনভাবে নারীদের প্রতি অশালীন, লাঞ্ছনাকর ও হয়রানিমূলক আচরণ করেছেন। 

এছাড়া, যদি ওর কাছ থেকে আগেও এ রকম কোনো আচরণের শিকার হয়ে থাকে বা কোনো প্রমাণ থেকে থাকে, সে যেন গোপনীয়তা বজায় রেখে হলেও সেটা প্রকাশ্যে আনে। 

পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ জারি করেন। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের '২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায় (আইডিঃ ২১০৬১৬৯)-এর ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে বাতিল করা হলো। 

এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি স্থায়ী বহিষ্কার-এর বিষয়ে আজ বুধবার বুয়েট উপাচার্যের সাথে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন