বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

| ৬ কার্তিক ১৪৩২

ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে রাতভর গোলাগুলি

উভয় পক্ষের ২০ জনের অধিক হতাহতের আশঙ্কা

উখিয়া-টেকনাফ প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ২৩:০৭, ২১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২৩:০৮, ২১ অক্টোবর ২০২৫

উভয় পক্ষের ২০ জনের অধিক হতাহতের আশঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ফের ভয়াবহ সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তরভাগ। সোমবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলা এই গোলাগুলিতে উভয় পক্ষের ২০ জনের বেশি হতাহত হয়েছে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

রাতভর ভারী অস্ত্র, রকেট লঞ্চার, গ্রেনেড ও স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলির প্রচণ্ড শব্দ ঘুমধুম, তুমব্রু ও বাইশফাড়ি সীমান্তে ভেসে আসে, ফলে পুরো সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয়দের দাবি, সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ সংঘর্ষ শুরু হয় এবং ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। নারী-শিশুদের অনেকেই রাতেই বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়দের কাছে আশ্রয় নেন।

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে রাখাইন রাজ্যের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নিতে আরাকান আর্মি  তৎপরতা বাড়িয়েছে। এই বাহিনী রাখাইনের কিছু এলাকা থেকে আরসা  ও আরএসও -কে হটাতে একযোগে অভিযান চালাচ্ছে। সোমবার রাতে সংঘর্ষ চলাকালে আরাকান আর্মির প্রায় ১০০-১৫০ জন সদস্য তিনটি ঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর জবাবে আরসা ও আরএসও সদস্যরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

স্থানীয় সীমান্ত নজরদারি সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ‘সমাজকাল’-কে জানান, “প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জনের বেশি হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। তবে সংঘর্ষস্থল মিয়ানমারের গভীর জঙ্গলে হওয়ায় সঠিক তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি।”

বিজিবির টহল জোরদার

ঘুমধুম, তুমব্রু ও বাইশফাড়ি সীমান্ত পয়েন্টে অতিরিক্ত টহল ও তল্লাশি জোরদার করেছে ৩৪ বিজিবি (কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন)। সীমান্তের ভেতরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকলেও বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।

বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস. এম. খায়রুল আলম ‘সমাজকাল’-কে বলেন, “রাতে গোলাগুলির শব্দ আমরা শুনেছি এবং তা মিয়ানমারের অভ্যন্তরেই ঘটেছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। সীমান্তে বিজিবির নজরদারি অব্যাহত আছে। কোনো অনুপ্রবেশ বা নিরাপত্তা ঝুঁকি সহ্য করা হবে না।”

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, “রাতভর গুলির শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে মানুষ ঘুমাতে পারেনি। অনেক পরিবার রাতেই আত্মীয়দের বাড়িতে চলে গেছে। বিজিবির পক্ষ থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।”

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম জানান, “বিভিন্ন সূত্রে শুনেছি, সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছে। তবে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।”

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত দীর্ঘদিনের। দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধের পাশাপাশি স্থানীয় সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও নিয়ন্ত্রণ যুদ্ধ বেড়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরাকান আর্মি ও আরসা-আরএসও’র মধ্যে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে অস্থিরতা বাড়ছে।

সীমান্তে বিজিবি সতর্ক পাহারায় থাকলেও, সীমান্তবাসীর মনে আতঙ্ক রয়ে গেছে—আবারও গুলিবর্ষণ শুরু হলে কী ঘটবে, তা নিয়ে অজানা শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ঘুমধুম ও তুমব্রু এলাকায়।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন