কোস্ট গার্ড–নৌবাহিনীর অভিযান
নারী–শিশুসহ ২৫ জন উদ্ধার, দুই পাচারকারী গ্রেপ্তার
শহিদুল ইসলাম, উখিয়া–টেকনাফ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬:১৮, ৪ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:১৯, ৪ নভেম্বর ২০২৫
						ছবি: সমাজকাল
কক্সবাজারের টেকনাফে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে পাহাড়ি এলাকায় আটক রাখা নারী ও শিশুসহ ২৫ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। এসময় দুই মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় যৌথ অভিযান চালানো হয়। এতে পাচারকারীদের গোপন আস্তানা থেকে ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার এবং দুই পাচারকারীকে আটক করা হয়।
উদ্ধারকৃতদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া ভুক্তভোগীরা জানান, কিছু দালালচক্র বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। অনেকে চাকরির আশায় নিজেদের সঞ্চয় ও ধারকর্জ করে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়।
তারা আরও জানান, পাচারকারীরা মেরিন ড্রাইভ উপকূল থেকে নৌকা বা ট্রলারে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু যাত্রার আগ পর্যন্ত পাহাড়ি গুহা ও ঘরে তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা চলছিল।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন,`মানবপাচার একটি জঘন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দেশের উপকূল ও সমুদ্র এলাকা থেকে মানবপাচারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম দমন ও প্রতিরোধে সর্বদা সচেষ্ট।‘
তিনি আরও জানান, মানবপাচার প্রতিরোধে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ টহল আরও জোরদার করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধ করা যায়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মানবাধিকার কর্মীরা জানান, বছরের শেষ দিকে সমুদ্র শান্ত থাকায় সাগরপথে অবৈধভাবে বিদেশগমন বৃদ্ধি পায়। এই সুযোগে কিছু দালালচক্র রোহিঙ্গা ও স্থানীয় দরিদ্র মানুষদের টার্গেট করে পাচার নেটওয়ার্ক সক্রিয় করে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যে, গত পাঁচ বছরে শুধু টেকনাফ–উখিয়া অঞ্চলেই হাজারের বেশি মানুষকে সাগরপথে পাচার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তারা মনে করেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, স্থানীয় পর্যায়ে নজরদারি ও পাচারকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করলেই এই অপরাধ কমানো সম্ভব।
কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও কিশোরী রয়েছেন। তাদের পরিচয় যাচাই শেষে সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হবে।
এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
 
