বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

| ৮ কার্তিক ১৪৩২

রাশিয়ার যুদ্ধবিরতিতে অস্বীকৃতি

পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক স্থগিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩:৫৯, ২২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৪:০০, ২২ অক্টোবর ২০২৫

পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক স্থগিত

ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাশিয়ার অস্বীকৃতির পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠক স্থগিত করেছে হোয়াইট হাউস। পরে ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, তিনি কোনো ‘অর্থহীন বৈঠকে’ সময় নষ্ট করতে চান না।

গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, আলোচনার পথে একটি বড় বাধা হলো বর্তমান সমররেখায় সংঘাত স্থগিতে রাশিয়ার অস্বীকৃতি।

হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই।’ যদিও গত সপ্তাহেই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, দুই নেতার মধ্যে শিগগিরই হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বৈঠক হতে যাচ্ছে। 

তার আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের মুখোমুখি বৈঠকের কথা ছিল। তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তাদের মধ্যে ইতিবাচক ফোনালাপ হয়েছে, ফলে সরাসরি সাক্ষাতের আর প্রয়োজন নেই।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এমন কোনো বৈঠকে যেতে চান না যার ফলাফল থাকবে না। তবে আগামী দু’দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে আরও কিছু জানানো হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

রাশিয়ার বিনিয়োগ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, বৈঠকের প্রস্তুতি এখনো চলছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সূত্রগুলো বলছে, রাশিয়া শান্তি আলোচনার জন্য যে শর্ত দিয়েছে, তা বাস্তবে যুদ্ধবিরতির পথ রুদ্ধ করছে। গত সপ্তাহান্তে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অনানুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে জানায়, দোনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো যুদ্ধবিরতি শুরু করা যাবে না। অর্থাৎ বর্তমান সমরেখায় সংঘাত স্থগিতের ট্রাম্পের প্রস্তাব কার্যত তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ইউরোপীয় নেতারা ওয়াশিংটনকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমান সমররেখা ধরেই যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়া উচিত, এবং এ অবস্থান থেকে যেন পিছু হটা না হয়। এদিন ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ওয়াশিংটন পৌঁছান। সেখানে ইউরোপীয় দেশগুলোর অবস্থান তুলে ধরার কথা তার।

এর আগে গত আগস্টে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকে তেমন অগ্রগতি হয়নি। ফলে নতুন বৈঠক ঘিরে প্রত্যাশাও ছিল কম। রুবিও-ল্যাভরভ বৈঠক স্থগিত হওয়ায় অনেক বিশ্লেষক বলছেন, রাশিয়া অতিরিক্ত দাবি তোলায় যুক্তরাষ্ট্র বুঝে গেছে বুদাপেস্টে কোনো বাস্তব চুক্তি সম্ভব নয়।

এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, ‘রাশিয়া হয়তো খুব বেশি কিছু চাইছে, আর যুক্তরাষ্ট্রও বুঝে গেছে এখান (বুদাপেস্টে) থেকে কোনো লাভ হবে না।’  আরেক কূটনীতিকের মতে, রাশিয়া এখনো ‘যুদ্ধের যে অবস্থানে সেখানেই যুদ্ধ থামাতে’ রাজি নয়।

ইউরোপীয় দেশগুলো আশঙ্কা করছে, পুতিনের কাছ থেকে কোনো বড় ছাড় না নিয়েই ট্রাম্প যদি বৈঠকে বসেন, তবে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক দুর্বলতার প্রমাণ। তবে ট্রাম্প বারবার বলেছেন, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়া উচিত যেভাবে আছে সেভাবেই—অর্থাৎ বর্তমান যুদ্ধরেখায় সংঘাত থেমে যাক।

কিয়েভে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প প্রকাশ্যে এই অবস্থান সমর্থন করেন। যদিও বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈঠকে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের কিছু অংশ রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেছেন, দোনবাসের যেসব এলাকা ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা কখনো ছাড়বেন না।

এদিকে ইউরোপীয় নেতারা এ সপ্তাহে জেলেনস্কিকে নিয়ে যৌথ বৈঠকে বসছেন। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পথ নিয়ে নতুন করে আলোচনা হবে। তবে রাশিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের ধারণা তারা গ্রহণ করবে না।

বুদাপেস্টকে বৈঠকের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে নির্ধারণ নিয়েও বিতর্ক চলছে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানই একমাত্র নেতা, যিনি এখনো পুতিনের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।

সূত্র: রয়টার্স 

 

আরও পড়ুন