বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

| ৮ কার্তিক ১৪৩২

সিইসিকে জানালেন আব্দুল মঈন খান 

প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের নির্বাচনে চায় না বিএনপি 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪:৪৮, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের নির্বাচনে চায় না বিএনপি 

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রশাসন ও সরকারি বিতর্কিত কর্মকর্তারা যাতে যুক্ত হতে না পারেন সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) জানিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে বলে বিএনপিকে জানিয়েছেন সিইসি। 

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান।

এসময় আব্দুল মঈন খান বলেন, গত ১৫ বছরে প্রশাসনকে একটি রাজনৈতিক দলের অনুগতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে অতীতের তিনটি নির্বাচনে ভোটাররা প্রহসনের শিকার হয়েছেন। এই বাস্তবতার মধ্যেও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে যুক্ত না হতে পারেন। কমিশন যেন এমন একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেন, যেখানে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, অতীতের সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা বাস্তবসম্মত নয়। বরং তাদের মধ্যে যারা অতীতে চাপ বা ভয়ের কারণে অন্যায় করেছে, তাদের এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ অন্তরে গণতান্ত্রিক। যখন তারা বুঝবে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, তখন এটি উৎসবমুখর একটি ঘটনার রূপ নেবে।

আব্দুল মঈন খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য কোনো ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ নয়- জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যই আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ১৭ বছরের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পর, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় আমরা চাই— ১৮ কোটি মানুষ যেন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করতে পারে, সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে, আর ১২ কোটি ভোটার যেন নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি যেন তারা একটি উদাহরণ স্থাপন করে, যাতে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝতে পারে— বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগোচ্ছে।’ 
বিএনপির এই নেতা বলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। যদিও কমিশনের নিজস্ব জনবল সীমিত, তবুও একটি দিনে সারা দেশে প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ও তিন লাখ বুথে নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে অন্তত ১০ লাখ জনবল প্রয়োজন। এই জনবল সরকারের প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আসে। ফলে এই বিশাল কাঠামো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কি না, তা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন ভূমিকা নিতে হবে যাতে জনগণ বিশ্বাস করে যে তাদের কোনো দলীয় স্বার্থ নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি দৃশ্যমানভাবে সেই নিরপেক্ষতার বার্তা দিতে পারে, তাহলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ তৈরি হবে।

একই সঙ্গে মঈন খান বলেন, বিএনপি আগেই নির্বাচনী সংস্কার সংক্রান্ত তাদের প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন যদি সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে আসন্ন নির্বাচন হবে দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক।

বিএনপি নেতা বলেন, আমরা চাই, এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনুক, যাতে বিশ্ব বুঝতে পারে— বাংলাদেশ সত্যিই গণতন্ত্রের পথে ফিরছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির প্রতিনিধি দল। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া। এ তিনজন বিএনপি নির্বাচন কমিশন বিষয়ক কমিটির সদস্য।

এর আগে গত ৩ আগস্ট সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেছিল বিএনপির প্রতিনিধি দল।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন