কোনো চাপে গণভোটের প্রস্তাব মেনে নিইনি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫:০০, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৩৭, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘চব্বিশোত্তর বাংলাদেশের প্রধান শিক্ষা হলো—পরিবর্তন।’ জুলাই সনদ প্রসঙ্গে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আমরা কোনো চাপে গণভোটের প্রস্তাব মেনে নিইনি। জাতীয় নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদে গণভোট হতে পারে। এখন কিছু দল স্বাক্ষরের সুযোগ খুঁজছে—তাদের দাবিদাওয়া আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা হবে বলে আশা করছি।’
তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আদেশ ও প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জুলাই সনদকে আইনি কাঠামো দিতে পারেন—যাতে ভবিষ্যতে কেউ তা বাতিলের দাবি তুলতে না পারে।
তিনি বলেন, ‘সবক্ষেত্রে মেধা, জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সমাজের যে স্তরেই আমরা কাজ করি না কেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা ব্যাপক, কারণ তারা তরুণ প্রজন্মকে শেখান।’
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে আয়োজিত ‘চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে তারুণ্যের ভাবনায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গবেষণাধর্মী ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার জায়গা। এজন্য খাতভিত্তিক গবেষণামূলক শিক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘কর্মমুখী ও সময়োপযোগী কারিকুলাম নির্ধারণ করতে হবে। শুধু ধর্মীয় বা নৈতিক মূল্যবোধ নয়, শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহারেও পরিবর্তন আনা জরুরি।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের বিপুল জনসংখ্যাকে কর্মসংস্থানে আনতে হবে। কিন্তু শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে নয়, প্রত্যেককে নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।’
তিনি আত্মনির্ভরশীলতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, দেশের অর্থনীতিতে তরুণ উদ্যোক্তাদের অবদানই হবে নতুন বাংলাদেশের চালিকাশক্তি।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর যে পরিবর্তনের ঢেউ উঠেছে, তা কেবল সরকারবিরোধী আন্দোলনের নয়—এটি ছিল দীর্ঘ ১৫–১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জনরোষের বহিঃপ্রকাশ। এক দফার ভিত্তিতে আন্দোলন দ্রুত তীব্র হয় এবং রক্তের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।’
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যত সংস্কারই করি না কেন, মানসিক সংস্কার আগে করতে হবে। না হলে আইনি কাঠামো টেকসই হবে না। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে আইনি রূপান্তর জরুরি—তবেই জাতির মুক্তি সম্ভব।’
সভায় স্বাগত বক্তব্যে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) মহাসচিব ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, ‘একটি জাতি গঠনে শিক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু শিক্ষাকে হতে হবে কর্মসংস্থানমুখী ও যুগোপযোগী। সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষা কেবল বেকারত্ব বাড়িয়েছে।’
তিনি তরুণদের ভাবনায় জ্ঞানভিত্তিক, চাহিদাভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার আহ্বান জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউট্যাব প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাবিদেরা।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সরকারের অবহেলায় শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এই জঞ্জাল দূর করতে হবে। কর্মমুখী ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে নতুন প্রজন্ম পিছিয়ে পড়বে।’