চীনের ওপর ১৫৫% শুল্কের হুমকি ট্রাম্পের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩:০৪, ২২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৪:৫৬, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন আগামী ১ নভেম্বর থেকে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১৫৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, “আমি চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাই, কিন্তু তারা বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেছে। এবার কঠোর হতে হবে।”
মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “আমরা চীনকে অনেক সময় দিয়েছি। কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিপরীতে বাণিজ্য করেছে। এখন সময় এসেছে সমতা ফিরিয়ে আনার।”
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চান, কিন্তু ‘চীনের আচরণ’ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘদিনের বাণিজ্যঘাটতি তৈরি করেছে। তার ভাষায়, “আমাদের এমন প্রেসিডেন্টরা ছিলেন যারা ব্যবসার দিক থেকে খুব বেশি বুদ্ধিমান ছিলেন না। চীনসহ অনেক দেশ সেসব দুর্বল নেতৃত্বের সুযোগ নিয়েছে।”
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর গড়ে ৫৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রেখেছে। কিন্তু ১ নভেম্বর পর্যন্ত বেইজিং কোনো বাণিজ্যচুক্তি না করলে, তা বেড়ে ১৫৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমাদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে শুল্কভিত্তিক বাণিজ্যচুক্তি রয়েছে। এগুলো জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবেই দেখা উচিত।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘোষণার মাধ্যমে ট্রাম্প তার ‘সেকেন্ডারি শুল্ক কৌশল’ আরও জোরদার করলেন। যুক্তরাষ্ট্র এখন এমন দেশগুলোর ওপর চাপ দিচ্ছে যারা রাশিয়ার তেল কিনে পরোক্ষভাবে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে সহায়তা করছে বলে ওয়াশিংটনের অভিযোগ। এর মধ্যে চীন অন্যতম।
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি চীনের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে চাই। কিন্তু এখন তারা রাশিয়ার সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠ, আর আমরা সেটি উপেক্ষা করতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের অর্থ বিদেশি শত্রুর হাতে যেতে দিতে পারি না।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঘোষণায় বৈশ্বিক বাণিজ্য ও সরবরাহ শৃঙ্খলে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ হলে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা-পণ্যের দাম আরও বাড়বে। একই সঙ্গে চীনের রপ্তানি কমে গেলে বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামাল ও ইলেকট্রনিক উপকরণের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীন যদি পাল্টা শুল্ক আরোপ করে বা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে, তবে ২০২৬ সালের শুরুতেই বৈশ্বিক বাজারে মূল্যস্ফীতি আবারও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ হলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বিকল্প সরবরাহকারী হিসেবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকে ঝুঁকবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও ভারত এর সুযোগ পেতে পারে।
তবে কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ ও ইলেকট্রনিক উপাদানের দাম বেড়ে গেলে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে রপ্তানি প্রতিযোগিতা সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে।