রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমান ফ্রন্টলাইন ঘিরে শান্তি আলোচনার পক্ষে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:৪৯, ২২ অক্টোবর ২০২৫

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বর্তমান ফ্রন্টলাইনকে ভিত্তি করে শান্তি আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন— “যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত এবং বর্তমান যুদ্ধরেখাকে কেন্দ্র করেই শান্তি আলোচনার সূচনা হওয়া দরকার।”
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে প্রস্তাবিত শান্তি সম্মেলনের প্রস্তুতি জটিলতায় পড়েছে। বৃহস্পতিবার বুদাপেস্টে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। ল্যাভরভের উপমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ জানিয়েছেন, “এখনই সরাসরি সাক্ষাতের সময় নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিয়ার্তো ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে বলেছেন, “আগামী দিনগুলোই নির্ধারণ করবে ইউরোপীয় নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ।”
ইউক্রেনের মিত্র রাষ্ট্রগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ট্রাম্প যেন আগের মতো পুতিনের কাছ থেকে কোনও ছাড় না নিয়েই বৈঠকে না বসেন। গত আগস্টে আলাস্কায় পুতিন ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
তবে শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন— বর্তমান ফ্রন্টলাইনকে কেন্দ্র করেই যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করা উচিত। যদিও রাশিয়ার অবস্থান ভিন্ন; তারা দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতির আগে ইউক্রেনকে আরও কিছু এলাকা ছেড়ে দিতে হবে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্প–জেলেনস্কি বৈঠকটি ছিল বেশ উত্তপ্ত। ট্রাম্প বৈঠকে রুশ দাবি মেনে নিতে জেলেনস্কিকে চাপ দেন, এমনকি একাধিকবার অশালীন ভাষাও ব্যবহার করেন বলে সূত্রের বরাতে জানা গেছে। তবু জেলেনস্কি বৈঠকটিকে “সফল” বলে অভিহিত করেছেন, কারণ ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নেন।
আগামী সপ্তাহে ইউরোপীয় নেতারা জেলেনস্কিকে অতিথি হিসেবে নিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন— প্রথমটি ইইউ শীর্ষ সম্মেলন, দ্বিতীয়টি ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট। আলোচনার মূল বিষয় হবে যুদ্ধ-পরবর্তী ইউক্রেনের নিরাপত্তা কাঠামো। রাশিয়া ইতিমধ্যেই এই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
বুদাপেস্টে প্রস্তাবিত পুতিন-ট্রাম্প সম্মেলন নিয়েও ইইউভিতরে বিভাজন তৈরি হয়েছে। কারণ হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। পুতিন যদি সম্মেলনে যোগ দিতে চান, তবে তাকে ইউরোপীয় আকাশসীমা পেরোতে হবে। পোল্যান্ড ঘোষণা দিয়েছে— তাদের আকাশসীমা দিয়ে গেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পরোয়ানার ভিত্তিতে পুতিনকে গ্রেফতার করা হতে পারে। অন্যদিকে বুলগেরিয়া জানিয়েছে, তারা রুশ প্রেসিডেন্টকে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেবে।
ইউরোপীয় কূটনীতিকদের মতে, ইউক্রেন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে এখনো পূর্ণ সমন্বয় তৈরি হয়নি। তবে বুদাপেস্টে যদি ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক হয়, তাহলে সেটি হবে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি আলোচনার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।