বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

| ৮ কার্তিক ১৪৩২

জন্মদিনে কবি শামসুর রাহমানকে শ্রদ্ধা-স্মরণ

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯:৪৭, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১০:১৯, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

জন্মদিনে কবি শামসুর রাহমানকে শ্রদ্ধা-স্মরণ

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর, ১৯২৯—১৭ আগস্ট, ২০০৬)

আজ কবি শামসুর রাহমানের জন্মদিন। ৯৬ বছর আগে ১৯২৯ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

শামসুর রাহমান আধুনিক বাংলা কবিতার ভুবনে এক অনন্য স্থান দখল করেছেন। পঞ্চাশের দশকে তিনি কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে দুই বাংলায় সমাদৃত হয়ে ওঠেন। তার কবিতায় শহুরে জীবনের নিঃসঙ্গতা, প্রেম, মানবিক অনুভূতি, প্রতিবাদ ও স্বাধীনতার আহ্বান এক সঙ্গে প্রবাহিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ‘মজলুম আদিব’ ছদ্মনামে কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকায় কবিতা লিখে দেশের মানুষের মনোবল জাগিয়েছেন। তার লেখা ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতা দুটি আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের গল্প বর্ণনা করে।

'স্বাধীনতা তুমি' কবিতায় তিনি লিখেছেন, ‘স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন/ স্বাধীনতা তুমি উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন/ স্বাধীনতা তুমি বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ/ স্বাধীনতা তুমি গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল, হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।’

'তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা' কবিতায় লিখেছেন, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা/ তোমাকে পাওয়ার জন্যে/ আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?/ আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?’ তার লেখা এই লাইনগুলো মানুষকে এখনো প্রচণ্ড নাড়া দেয়।

শামসুর রাহমানের কবিতা, কবিতার বাক্য প্রচণ্ড শক্তিশালী। তিনি কবিতার বাক্যে শক্তি মজুত করতে পেরেছেন, এটা তার বিশেষত্ব। এই বিষয়টি পাঠক সমাজে হয়তো এখনো পুরোপুরি আবিষ্কৃতও হয়নি! একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। তার উত্তর কবিতাকে গান হিসেবে ব্যবহার করেন 'নগর বাউল' জেমস। এতে কবিতার ভেতর মজুত রাখা শক্তি প্রকাশিত হয়। বিখ্যাত সেই কবিতা-গানের কয়েকটি লাইন এরকম, ‘সুন্দরীতমা আমার/ তুমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতে পারো/ এই আকাশ আমার/ নীলাকাশ রবে নিরুত্তর/ মানুষ আমি চেয়ে দেখো/ নীলাকাশ রবে নিরুত্তর/ যদি তুমি বলো আমি একান্ত তোমার/ আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো তুমি আমার/ আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো আমি তোমার’।

এই যে জেমস গান গেয়ে শামসুর রাহমানের একটি কবিতায় মজুত থাকা শক্তির প্রকাশ ঘটালেন, এরকম তো আরও অনেক কবিতায় এই ব্যাপারটা আছে। হয়তো ভবিষ্যতে তা আবিষ্কৃত হবে।

সমাজের প্রতি শামসুর রাহমানের দায়বদ্ধতা, মানুষের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি সংবেদনশীলতা এবং কলমের মাধ্যমে সত্যের সন্ধান, এগুলোই তাকে যুগান্তকারী কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

আজকের এই দিনে আমরা তার অবদানের কথা স্মরণ করি, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তার কবিতা আমাদের দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ করে, আমাদের স্বাধীনতা, মানবতা ও ভালোবাসার মূল্য মনে করিয়ে দেয়। শামসুর রাহমানের কাব্যিক মেলবন্ধন আমাদের জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে আছে, যা অনন্তকাল ধরে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের পথপ্রদর্শক হবে।

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন