রোববার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

| ৩ কার্তিক ১৪৩২

অগ্নিকুণ্ডে প্রশান্তির পরশ

মাইসারা জান্নাত

প্রকাশ: ২৩:৫৫, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

অগ্নিকুণ্ডে প্রশান্তির পরশ

মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঈমান ও কুফরের সংঘর্ষের যত দৃশ্য রচিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও নমরুদের অগ্নিকুণ্ডের ঘটনা সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী ও বিস্ময়কর। একদিকে অহংকারী বাদশা নমরুদ, যে নিজেকে খোদা দাবি করেছিল। অন্যদিকে নির্ভীক নবী ইবরাহিম (আ.), যিনি এক আল্লাহর তাওহিদের দাওয়াত নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তার সামনে। যখন যুক্তি ও সত্যের আলোতে নমরুদের মিথ্যা শক্তি ভেঙে পড়ল, তখন সে আগুনের ভয় দেখিয়ে ইবরাহিম (আ.)-কে নিঃশেষ করতে চাইল। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় সেই আগুনই হয়ে উঠল শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতীক। এই ঘটনা শুধু এক নবীর অলৌকিক রক্ষা নয়, বরং চিরকালীন এক শিক্ষা, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখে, তার জন্য জ্বলন্ত আগুনও পরিণত হয় প্রশান্তির পরশে।

অত্যাচারী বাদশাহ নমরুদ ৪০০ বছর রাজত্ব পরিচালনা করেছিল। সে নিজেকে একমাত্র উপাস্য দাবি করত। তার দরবারে ইবরাহিম (আ.)-এর বির্তক হয়েছিল আল্লাহর তাওহিদ ও একত্ববাদের বিষয়ে। এই বিতর্কে নমরুদ পরাজিত হয়ে তাকে আগুনে নিক্ষেপ করেছিল।

ইবরাহিম (আ.) যখন নমরুদের রাজ দরবারে গেলেন তখন নমরুদ তাকে জিজ্ঞেস করল, বলো তোমার উপাস্য কে? নমরুদ ভেবেছিল, ইবরাহিম (আ.) তাকেই উপাস্য বলে স্বীকার করবে। কিন্তু নির্ভীক কণ্ঠে ইবরাহিম (আ.) জবাব দিলেন, ‘আমার পালনকর্তা তিনি, যিনি মানুষকে বাঁচান ও মৃত্যু দেন’। নমরুদ বলল, ‘আমিও বাঁচাই ও মারি’। অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে খালাস দিয়ে মানুষকে বাঁচাতে পারি। আবার খালাসের আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারি। এভাবে সে নিজেকেই মানুষের বাঁচা-মরার মালিক হিসাবে সাব্যস্ত করল।

ইবরাহিম (আ.) তখন দ্বিতীয় যুক্তি পেশ করে বললেন, ‘আমার আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, আপনি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করুন’। ইবরাহিম (আ.)-এর এই চ্যালেঞ্জের কথা শুনে নমরুদ হতবুদ্ধি হয়ে গেল। কিন্তু সে নিজের এই প্রকাশ্য পরাজয় কোনোভাবে মেনে নিল না। অহংকারে ফেটে পড়ল সে। ইবরাহিম (আ.)-কে জ্বলন্ত আগুনে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার নির্দেশ জারি করল। একইসঙ্গে জনগণকে তার নিজের তৈরি ধর্মের দোহাই দিয়ে বললো, ‘তোমরা একে পুড়িয়ে মারো এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য করো, যদি তোমরা কিছু করতে চাও।’ (সুরা আম্বিয়া ৬৮)

নমরুদের নির্দেশমতো বিশাল আগ্নিকুণ্ড তৈরি করা হলো, এতে কয়েকদিন ধরে আগুন জ্বালানো হলো। তারপর সেখানে ইবরাহিম (আ.)-কে নিক্ষেপ করা হলো। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর ভরসা করলেন ইবরাহিম (আ.)। তিনি বললেন, ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতই না উত্তম তত্ত্বাবধায়ক’।

ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হলেও আগুন তাকে পুড়ালো নাা। আল্লাহ তায়ালা নিজ কুদরত ও অনুগ্রহে তাকে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা করলেন। তিনি আগুনকে শীতল হওয়ার আদেশ দিলেন। ফলে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য আরামদায়ক পরিবেশে পরিণত হলো।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নির্দেশের বিষয়টি উঠে এসেছে এভাবে, ‘হে আগুন! তুমি ইবরাহিমের জন্য ঠাণ্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া ৬৯) 

আল্লাহর আদেশে আগুন ইবরাহিম (আ.)-কে স্পর্শ করল না। তার জন্য নিরাপত্তাময় শীতল ও স্নিগ্ধ হয়ে গেল। তিনি শত্রুদের ভিড়ের মধ্য দিয়ে বের হয়ে গেলেন।

আরও পড়ুন