‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ কারা ও কী সুবিধা পান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৬, ২ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০১:২০, ২ ডিসেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করেছে সরকার। কাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষণা করা হয়? তারা কী কী সুবিধা পান?
রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বা ভেরি ভেরি ইমপোর্টেন্ট পারসন (ভিভিআইপি) এই মর্যাদা কোনও সামাজিক অভিধা নয়; এটি আইনগত ক্ষমতাসম্পন্ন একটি রাষ্ট্রীয় পদবাচ্য, যা ঘোষণা করা হয় বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০২১–এর অধীনে।
সাম্প্রতিক সময়ে এ বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে এবং অনেকেই জানতে চাইছেন—কাদের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করা যায়, কীভাবে ঘোষণা করা হয় এবং তারা কোন বিশেষ সুবিধা ও নিরাপত্তা পান।
আইনে কী বলা আছে?
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০২১–এর ধারা ২ অনুযায়ী: ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ অর্থ—সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান; এবং আইনের উদ্দেশ্য পূরণে সরকার যাকে অনুরূপ ব্যক্তি ঘোষণা করবে, তিনিও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।
অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণভাবে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—সম্প্রতি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এলে তাকে গেজেটের মাধ্যমে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করা হয়েছিল ৩ দিনের জন্য।
বর্তমানে এই ঘোষণা দেয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
তবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মতো পদাধিকারবলে থাকা ব্যক্তির স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিভিআইপি মর্যাদা নির্ধারিত থাকে—তাদের জন্য আলাদা প্রজ্ঞাপন প্রয়োজন হয় না।
কোন সুবিধা ও নিরাপত্তা পান ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’?
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্র ঘোষিত ভিভিআইপি–এর নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সরাসরি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)–এর ওপর বর্তায়।
আইনটির ধারা ৮(২)–এ বলা হয়, বাংলাদেশে অবস্থানরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও এসএসএফ দৈহিক নিরাপত্তা প্রদান করবে।
এ ছাড়া এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসএসএফের রয়েছে বিস্তৃত ক্ষমতা ও দায়িত্ব—
১. পূর্ণকালীন শারীরিক নিরাপত্তা
এসএসএফ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চলাফেরা, আবাসন, সফর, জনসমাগম এলাকা—সব জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
২. সম্ভাব্য হুমকি সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও সমন্বয়
এসএসএফ যেকোনও ব্যক্তি বা ঘটনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, যা অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে।
৩. জরুরি পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার ক্ষমতা
এসএসএফ যদি মনে করে কোনও ব্যক্তি নিরাপত্তার জন্য হুমকি—তাহলে বিনা গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। এই ক্ষমতা সারা দেশের যেকোনো স্থানে প্রযোজ্য।
৪. চরম পরিস্থিতিতে প্রাণঘাতী ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার
আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে—পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজন হলে এসএসএফ গুলি করতে পারে এমনকি হত্যাও করতে পারে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
কেন ভিভিআইপি ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ?
রাষ্ট্রীয় অতিথিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক অস্থিরতা–সংবেদনশীল সময়ে জাতীয় নেতাদের নিরাপত্তা জোরদার করা এবং দেশের ভাবমর্যাদা রক্ষার স্বার্থে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ভিভিআইপি ঘোষণা করা হয়। এই মর্যাদা কেবল সম্মান নয়—এটি একটি আইনগত সুরক্ষা–অধিকার।
