রোববার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

| ৪ কার্তিক ১৪৩২

মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্তের আগে কনডেম সেলে নয়

আপিল শুনানি ২৮ অক্টোবর নির্ধারিত

প্রকাশ: ১৪:৪৫, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৪১, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

আপিল শুনানি ২৮ অক্টোবর নির্ধারিত

ছবি: সংগৃহীত

মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে না—হাইকোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা আপিলের শুনানির জন্য আগামী ২৮ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেছে সর্বোচ্চ আদালত।

রবিবার (১৯ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী এই দিন ধার্য করেন। আদালতে রিটকারীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

২০২৪ সালের ১৩ মে হাইকোর্ট ঘোষণা করে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও অসাংবিধানিক। আদালত একইসঙ্গে জেল কোডের ৯৮০ বিধিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। রায়ে বলা হয়—আপিল, রিভিউ ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার ধাপ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না।

রায়ে আরও নির্দেশ দেওয়া হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত না হওয়া সত্ত্বেও কনডেম সেলে থাকা আসামিদের দুই বছরের মধ্যে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করতে হবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে (যেমন: স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বা সংক্রামক রোগ) কারা কর্তৃপক্ষ আদালতের অনুমতি নিয়ে নির্জন কক্ষে রাখার সুযোগ পাবে।

হাইকোর্টের এই রায় ঘোষণার দুই দিন পর, অর্থাৎ ১৫ মে ২০২৪-এ রাষ্ট্রপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। চেম্বার জজ আদালত (বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে) হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন। পরবর্তীতে এই আপিলের পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে ২৮ অক্টোবর।

২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা তিন বন্দি—জিল্লুর রহমান (সাতকানিয়া), আব্দুল বশির (সুনামগঞ্জ), ও শাহ আলম (খাগড়াছড়ি)—এর পক্ষে শিশির মনির হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

রিটে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তা কার্যকর করার আগে বেশ কিছু সাংবিধানিক ও আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়—যেমন হাইকোর্টের অনুমোদন (CrPC 374), আপিল ও রিভিউয়ের সুযোগ, এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার অধিকার (সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ)।
কিন্তু বাস্তবে বিচারিক আদালত মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার পরপরই আসামিদের নির্জন কনডেম সেলে রাখা হয়, যা মানবাধিকারের পরিপন্থী এবং আইনের চোখে বেআইনি।

২০২২ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চান—কেন মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা হবে না বেআইনি ঘোষণা করা হবে না?কেন জেল কোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না?

এছাড়া কারা মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়, দেশের সব কারাগারে কনডেম সেলে বন্দিদের বাস্তব অবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইকোর্টের এই রায় কেবল একটি আইনি পরিবর্তন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের কারা সংস্কার ও মানবাধিকার সুরক্ষায় এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে আসামিকে একাকী নির্জন কক্ষে আবদ্ধ রাখা মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতনের শামিল, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডেরও পরিপন্থী।

২৮ অক্টোবরের শুনানিতে আপিল বিভাগ চূড়ান্তভাবে স্থির করবে—হাইকোর্টের এই রায় বহাল থাকবে কি না। এর ফলাফল দেশের কারা প্রশাসন, মানবাধিকার নীতি এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের আইনি অধিকার—সবকিছুতেই দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন