রামু সহিংসতার আলোচিত উত্তম বড়ুয়া সপরিবারে ফ্রান্সে
উখিয়া-টেকনাফ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯:২২, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

বামপাশে স্ত্রী ও ডাপাশে ছেলে মাঝখানে উত্তম বড়ুয়া
কক্সবাজারের রামুতে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে ধর্মগ্রন্থ অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ভয়াবহ সহিংসতার কেন্দ্রীয় চরিত্র উত্তম বড়ুয়ার খোঁজ মিলেছে দীর্ঘ ১৩ বছর পর। সম্প্রতি ফ্রান্সের একটি বিমানবন্দরের লাউঞ্জে স্ত্রী রীতা বড়ুয়া ও একমাত্র ছেলে আদিত্যকে সঙ্গে নিয়ে তোলা তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ছবিটি পোস্ট করেছেন এ কে এম আতিকুজ্জামান নামের এক নেটিজেন, যিনি লিখেছেন—“উত্তম হারিয়ে গিয়েছিল, ১৩ বছর ১৩ দিন পর অবশেষে তাঁর খোঁজ পেল পৃথিবী।”
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুকে উত্তম বড়ুয়া নামে একটি আইডি থেকে পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে রামু, উখিয়া ও টেকনাফজুড়ে। সেই রাতে রামুতে ১২টি বৌদ্ধবিহার ও ২৬টি ঘর পুড়িয়ে দেয় উগ্রপন্থীরা। পরদিন উখিয়া ও টেকনাফেও আরও সাতটি বিহারে আগুন ধরানো হয়।
এই ঘটনার পর থেকে উত্তম বড়ুয়া ও তাঁর পরিবার গা-ঢাকা দেন। জানা যায়, রীতা বড়ুয়া একমাত্র সন্তান আদিত্যকে নিয়ে জীবনের কঠিন সময় পার করেন। সম্প্রতি আদিত্য এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ভয়াবহ সেই সহিংসতার ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে মোট ১৯টি মামলা দায়ের হয়, যার মধ্যে ১৮টি এখনও বিচারাধীন। প্রায় ৯০০ আসামি ও ১৬০ জন সাক্ষী থাকলেও সাক্ষ্য গ্রহণের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। তিনটি মামলা পুনঃতদন্তের জন্য পিবিআইয়ের কাছে রয়েছে।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের প্রধান প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, “২০১২ সাল থেকে এখনো একটি মামলারও বিচার হয়নি—এটি অত্যন্ত হতাশাজনক।”
রামু বৌদ্ধ যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া বলেন, “হামলায় জড়িতরা কোনো ধর্মের হতে পারে না। আমরা দ্রুত পুনঃতদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত একযুগে রামুর পুড়ে যাওয়া বিহারগুলো দৃষ্টিনন্দনভাবে পুনর্নির্মিত হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরেছে। তবে সাক্ষীরা এখনো ভয়ে মুখ খুলতে চান না।
প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বর বৌদ্ধ সম্প্রদায় দিনটি পালন করে বুদ্ধ উপাসনা, পতাকা উত্তোলন ও অষ্টশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, “উত্তম বড়ুয়া পরিবারসহ ফ্রান্সে রয়েছেন—এমন খবর আমি এখনো পাইনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।”
এক যুগ পর উত্তম বড়ুয়া ও তাঁর পরিবারের ছবি প্রকাশের পর রামুতে আবারও আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকের মতে, এটি শুধু এক পরিবারের ফিরে আসার গল্প নয়—এটি বিচারহীনতার এক দীর্ঘ অধ্যায়ের প্রতীক।
রামুর মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি সেই বিভীষিকাময় রাতের আগুন ও ধ্বংসস্তূপ।১৩ বছর পর উত্তম বড়ুয়ার দেখা মিললেও, বিচারের আলো এখনো আসেনি।