পাচারের অর্থ ফেরাতে ১২ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:০৩, ৬ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০১:২৭, ৭ অক্টোবর ২০২৫

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করতে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ১২টি আন্তর্জাতিক আইন ও অ্যাসেট রিকভারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের সন্ধান ও ফেরত আনার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা দেবে।
সোমবার গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভায় ৩২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও সিইও ওমর ফারুক খান জানান, আন্তর্জাতিক ল-ফার্ম ও অ্যাসেট রিকভারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এনগেজ করলে পাচার হওয়া টাকাগুলো ফেরত আনা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে একাধিক ব্যাংক মিলে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করবে এবং বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে এনডিএ (গোপনীয়তা চুক্তি) করে প্রক্রিয়া শুরু করবে।
তিনি আরও জানান, স্পেশাল সিআইডি ইতিমধ্যে ১১টি স্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীর নাম শনাক্ত করেছে—যার মধ্যে বসুন্ধরা, নাসা, এস আলমসহ বেশ কিছু বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ইউসুবিল শতকরা এক-দুটি অ্যাডভান্সও এসেছে বলে তিনি জানান।
এবি ব্যাংকের এমডি মিজানুর রহমান বলেন, “এটি কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংকের প্রকল্প নয়; বরং ‘টোটাল ব্যাংকিং কনসেপ্ট’-এর আওতায় বহু ব্যাংক একসঙ্গে কাজ করবে।”
পূবালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের অংশ হিসেবে ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এনডিএ চুক্তির মাধ্যমে ফরেন অ্যাসেট রিকভারি কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।
প্রাথমিক তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্য ছাড়াও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ পরিবারের আরামিট গ্রুপ, এস আলম, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, সিকদার, নাসা, ওরিয়ন, জেমকন, নাবিল ও সামিট গ্রুপের নাম। অভিযোগ আছে, এই শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের কাছে সুবিধাভোগী হিসেবে পৌঁছেছে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা নিয়েছিল—দ্য স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (StAR), ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-কোরাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি। এসব সংস্থা তথ্য সংগ্রহে সফল হয়েছে এবং এখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে—বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন দ্রুত ১২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।