শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

বদরুদ্দীন উমর

জন্ম শিক্ষা কর্ম ও লেখা 

 নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬:২৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জন্ম শিক্ষা কর্ম ও লেখা 

বদরুদ্দীন উমরের জন্ম ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমানে। বাংলাদেশি লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)-এর নেতা।

২০২৫ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।


প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্ধমান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ভারতীয় উপমহাদেশের একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ আবুল হাশিম ও মা মাহমুদা আখতার মেহেরবানু বেগম। যদিও তার বাবা আবুল হাশিম একজন সাম্যবাদী পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধী ছিলেন, তথাপি তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৫০ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। 

উমর ১৯৪৮ সালে বর্ধমান টাউন স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫০ সালে তিনি বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। দর্শন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৫৫ সালে। 

১৯৬১ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলোসফি, পলিটিক্স অ্যান্ড ইকোনমিক্স (পিপিই) ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন

প্রথমে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। বদরুদ্দীন উমর ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয় তারই হাত ধরে এবং ১৯৬৮ সালে পদত্যাগ করেন।

তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ছিলেন।

তিনি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে 'সংস্কৃতি' নামে একটি রাজনৈতিক সাময়িকী সম্পাদনা করেছেন। 

তিনি ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন। তাকে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ১৯৭৬ সালের মাঝামঝি অনুষ্ঠেয় বিশেষ কংগ্রেসের প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়। 

২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

প্রকাশিত গ্রন্থ

জীবদ্দশায় বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অসংখ্য বই লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন বদরুদ্দীন উমর। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-

প্রবন্ধ-গবেষণা

সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭), সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৮), পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি (১ম খণ্ড ১৯৭০, ২য় খণ্ড ১৯৭৬ ও ৩য় খণ্ড ১৯৮১), চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক (১৯৭২)।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ (১৯৭৩), বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা (১৯৭৪), যুদ্ধোত্তর বাঙলাদেশ (১৯৭৪), যুদ্ধ পূর্ব বাঙলাদেশ (১৯৭৬), ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৮০), বাঙলাদেশে মার্কসবাদ (১৯৮১)।

আমাদের ভাষার লড়াই, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ (১৯৮১), বাঙলাদেশে বুর্জোয়া রাজনীতির চালচিত্র (১৯৮২), ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন (১৯৮৪), মার্কসীয় দর্শন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৮৬)
বাঙলাদেশের কৃষক ও কৃষক আন্দোলন (১৯৮৬)
বাঙলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কয়েকটি দিক (১৯৮৭)।

বাঙলাদেশে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ধারা (১৯৮৭), বাঙলাদেশে ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার (১৯৮৯), বাঙলাদেশের মধ্যবিত্ত ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি (১৯৮৯), সামরিক শাসন ও বাঙলাদেশের রাজনীতি (১৯৮৯)।

পশ্চাৎপদ দেশে গণতন্ত্রের সমস্যা (১৯৯০), বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লব (১৯৯০), বামপন্থী মহলে অনৈক্য ও গণতান্ত্রিক ঐক্য প্রসঙ্গে (১৯৯১), নববই-এর নাগরিক বুর্জোয়া অভ্যুত্থান ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৯২)।

প্রতিবিপ্লব ও সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ (১৯৯২), গণআদালত-একাত্তরের অসমাপ্ত মুক্তি সংগ্রামের জের (১৯৯২), নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রবন্ধ (১৯৯৩), ধর্ম, রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা (কলকাতা, ১৯৯৩), ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে (১৯৯৪), মুক্তি কোন পথে? (১৯৯৪)।

বাঙলাদেশে গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র (১৯৯৪)
বাঙলাদেশের আর্থ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি (১৯৯৪)
বাঙলাদেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য (১৯৯৪)
সাম্রাজ্যবাদের নতুন বিশ্বব্যবস্থা (১৯৯৫), জনগণের হাতে ক্ষমতা-নির্বাচন না অভ্যুত্থান? (১৯৯৬)।

 আমাদের সময়কার জীবন (১৯৯৬), নির্বাচিত বক্ততা (১৯৯৬), বাঙলাদেশে বুর্জোয়া রাজনীতির দুইরূপ (১৯৯৭), বাঙলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি (১৯৯৭), বিবিধ প্রসঙ্গ (১৯৯৮)
সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্ব পরিস্থিতি (১৯৯৮)।

দ্বিতীয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাঙলাদেশ (১৯৯৯), বাঙলাদেশের বামপন্থীরা; একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক ভুমিকা (২০০০), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০০০), একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের পথে (২০০০), সাক্ষাৎকার (২০০১)।

বাঙলাদেশে ফ্যাসীবাদ (২০০১), শিক্ষা ও শিক্ষা আন্দোলন (২০০১), জনগণের সংগ্রামের পথ (২০০২), বাঙলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র (২০০৩)
সংসদীয় রাজনীতি, জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০৩)।

আমার জীবন (২০০৪), প্যালেস্টাইন, আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ (২০০৪), আমার পিতা (২০০৫), বাঙলাদেশে ইতিহাস চর্চা (২০০৬), শতাব্দীর শুরুতে বাঙলাদেশের চিত্র (২০০৬), মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের জয়-পরাজয় (২০০৬), দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ (২০০৬),, বাঙলাদেশের অভ্যুদয় (১ম খন্ড ২০০৬), কার দিন বদল হলো (২০১০)।

ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থ

Politics and Society in East Pakistan and Bangladesh [পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজ] (১৯৭৩), Society and Politics in Pakistan [পাকিস্তানের সমাজ ও রাজনীতি] (কলকাতা, ১৯৮০)।

Politics and Society in Bangladesh [বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজ] (১৯৮৭), Towards the Emergency in Bangladesh [বাংলাদেশে জরুরি অবস্থার দিকে] (১৯৮০), Imperialism and General Crisis of the Bourgeoise in Bangladesh [বাংলাদেশে বুর্জোয়াদের সাম্রাজ্যবাদ ও সাধারণ সংকট] (১৯৮৬)।

Language Movement in East Bengal [পূর্ব বাংলায় ভাষা আন্দোলন] (২০০১)
Emergence of Bangladesh: Class Struggles in East Pakistan (1947-1958) [বাংলাদেশের উত্থান], অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পাকিস্তান (২০০৪)।‌ উল্লেখ্য, এটির প্রথম মুদ্রণ দ্রুতই নিঃশেষিত হলে দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয়।

কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, নয়া দিল্লি (২০১৭); বাঙ্গালা গবেষণা (২০২০), Emergence of Bangladesh: Rise of Bengali Nationalism (1958-1971), অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, পাকিস্তান (২০০৬)। এই বইটি পাকিস্তান সরকার ও সামরিক মহলের চাপে পড়ে গ্রন্থটির প্রকাশনা প্রকাশক অবিরত রাখতে পারেনি।

সম্পাদনা

অসংখ্য বই সম্পাদনা করেছেন তিনি। তার সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- 

সুকান্ত সমগ্র (১৯৭০), ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ : কতিপয় দলিল (১ম খন্ড ১৯৮৪ এবং ২য় খন্ড ১৯৮৫), স্ট্যালিন প্রসঙ্গ (১৯৯০), পার্বত্য চট্টগ্রাম : নিপীড়ন ও সংগ্রাম (১৯৯৭), নারী প্রশ্ন প্রসঙ্গে (২০০৩)।

আরও পড়ুন